ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শারদীয় দুর্গাপূজা: নগর ও জেলায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাবলয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
শারদীয় দুর্গাপূজা: নগর ও জেলায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাবলয় ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।  

প্রতিমা তৈরির স্থান থেকে শুরু করে পূজামণ্ডপ এবং শেষে বিসর্জন পর্যন্ত দেওয়া হবে নিরাপত্তা।

প্রতিটি মণ্ডপে থাকবেন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। টহলে থাকবে র‌্যাব-পুলিশ।
সাদা পোশাকে মাঠ পর্যায়ে চলছে গোয়েন্দা নজরদারি। চলছে সাইবার টহলও। এছাড়া মণ্ডপগুলোতে রাখা হবে সিসিটিভি ক্যামেরা ও নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা।  

পঞ্জিকা অনুসারে, রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ১ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে মণ্ডপে হবে দেবীর অধিষ্ঠান। ২ অক্টোবর সপ্তমী, ৩ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ৪ অক্টোবর মহানবমী ও ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী।

পুলিশ-র‌্যাবের দায়িত্বশীলরা বলছেন, দুর্গোৎসব ঘিরে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি বা হামলার তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তারপরও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন করতে শতভাগ নিরাপত্তা দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।  

গত বছর কুমিল্লার নানুয়ার দিঘিরপাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রেখে যায় এক যুবক। এরপর ওই মণ্ডপসহ নগরের আরও কয়েকটি মণ্ডপে ভাঙচুর চালানো হয়। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এমন ঘটনা রোধে এবার সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে পূজামণ্ডপের আয়োজকদের কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো: মণ্ডপে পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক আসা-যাওয়ার পথ রাখা। করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় মণ্ডপের প্রবেশমুখে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা। মণ্ডপের চারদিকে বা ওপরের অংশ উন্মুক্ত রাখা। মণ্ডপের ভেতরে একসঙ্গে ২০ জনের বেশি লোক অবস্থান না করা। মণ্ডপের প্রবেশমুখে ভিড় নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মণ্ডপসহ আশপাশের এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ করা। জরুরি সেবাদানকারীদের ফোন ও মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ করা এবং তা মণ্ডপের দৃশ্যমান স্থানে টাঙানো। বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জেনারেটর প্রস্তুত রাখা। বিদ্যুতের ক্রটিপূর্ণ সংযোগ দ্রুত মেরামত করা। সার্বক্ষণিক একজন ইলেকট্রিশিয়ান নিয়োগ করা। পূজামণ্ডপে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টর, আর্চওয়ে ইত্যাদি স্থাপন করা। অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার এক্সটিংগুইসার, পানি, বালু ইত্যাদি মজুদ রাখা। মন্দির বা পূজামণ্ডপে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে অনুষ্ঠান বা কার্যক্রম পরিচালনা করা। অহেতুক কোনো প্রকার থিম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা ডিজে পার্টি না করা। কোনও দ্বন্দ্ব থাকলে নিজেরা অথবা মহানগর পূজা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত মীমাংসা করা। আগত দর্শনার্থীদের অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টি থেকে সতর্ক করা। নামাজ ও আজানের সময় সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ রাখা। প্রতিমা পরিবহনে সহায়তার প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসির সঙ্গে সমন্বয় করা।  

এছাড়া পূজামণ্ডপে নারী দর্শনার্থীরা যাতে ইভটিজিং বা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করা। পূজামণ্ডপের ব্যবস্থাপনা কমিটি মণ্ডপসমূহে সার্বক্ষণিক নারী ও পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা। স্বেচ্ছাসেবকদের চেনার সুবিধার্থে গেঞ্জি, ক্যাপ, আর্মড ব্যান্ড ব্যবহার করা, স্বেচ্ছাসেবকদের নামের তালিকা সংশ্লিষ্ট থানার ওসির কাছে পাঠাতে হবে। যেকোন ধরনের ঘটনার সংবাদ দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করতে হবে। মদ ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পূজামণ্ডপের আশপাশে মেলা ও জুয়ার আসর বসানো যাবে না। আতশবাজি, পটকা ফোটানো যাবে না। যেকোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা গুজবের বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করতে হবে। ৫ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করতে হবে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, গতবছর পূজার সময় সারাদেশে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা সরকার ও প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য। আমাদের সম্প্রীতিকে নষ্ট করার জন্য অপচেষ্টা। এরকম কাজ যারা করে তারা সংখ্যায় কিন্তু কম। কোনো পূজামণ্ডপে ডিজে অনুষ্ঠান হবে না। এসময় মোবাইলের ইন্টারনেটে ধীরগতি থাকলে ফেসবুকে উল্টাপাল্টা লিখে অপপ্রচার চালানো বন্ধ হবে।  

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বাংলানিউজকে বলেন, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তরিক প্রশাসন। নগরের ২৮২টি পূজামণ্ডপে পুলিশ সদস্য থাকবে। প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছি। আর্থিক সংগতি সাপেক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে মন্দিরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রেখে বাইরে আলোকসজ্জা পরিহার করতে বলা হয়েছে। পূজামণ্ডপে ডিজে চললে আমরা নিজেরেই গিয়ে সেটা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পূজা হবে সাত্ত্বিকভাবে।

চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত বলেন, নগর ও জেলায় মোট ২ হাজার ৩২৪টি প্রতিমা ও ঘটপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় জানান, শারদীয় দুর্গাপূজায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। নিরাপত্তার জন্য সাদা পোশাকে পুলিশ নিয়োগের পাশাপাশি চার স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং করা হবে।  

দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা প্রস্তুতি বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ্ বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ যাবতীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গুরুত্ব অনুসারে পূজামণ্ডপ অতিগুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ শ্রেণিতে বিভক্ত করে সে অনুপাতে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এছাড়া পূজা উদযাপনকালে সড়ক-মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে সিসিটিভি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।