ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কাউকে তাড়ানো হবে না: মমতা

সুকুমার সরকার কো-অর্ডিনেশন এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৮ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৪
কাউকে তাড়ানো হবে না: মমতা নদীয়ার কারবালা ময়দানে মমতা

কলকাতা থেকে: বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে এসে নির্বাচনী বিধি ভেঙে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছেন৷ বাঙালি-অবাঙালির মধ্যে বিভেদ তৈরি করার পাশাপাশি ‘বাংলাদেশি খেদাও' হুমকি দিচ্ছেন মোদী৷ মোদীর বিরু‌দ্ধে এসব অভিযোগ তুলে এফআইআর করে তাকে গ্রেফতার দাবি তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

সোমবার বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদীর বিরু‌দ্ধে নির্বাচন কমিশনে এ অভিযোগ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ দলের পক্ষ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় দিল্লিতে কমিশনের কাছে এ চিঠি পাঠিয়েছেন৷

চিঠিতে একইসঙ্গে মোদীর এ উস্কানিমূলক প্রচার বন্ধের দাবি করা হয়েছে৷ এ রাজ্যে মোদী ৭ মে প্রচার করতে চাইছেন৷ সে প্রচার কার্যত বন্ধের দাবি করা হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে৷ তৃণমূলের মতে, মোদী এলে রাজ্যে অশান্তি ছড়াবে৷

এমনকি আসামের মতো বড় ধরনের অশান্তি ও গোলমাল ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন আসামে বোড়ো জঙ্গিদের আক্রমণে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তার পেছনেও রয়েছে মোদীর উস্কানিমূলক বক্তৃতা৷

সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁও, হাবড়া ও বেড়াচাঁপায় সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বনগাঁর তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর, বারাসতের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও বসিরহাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী ইদ্রিস আলির সমর্থনে প্রচারসভা চালান মমতা।

এসব সভায় তিনি মোদীর উস্কানিমূলক মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন৷

এদিকে শুধু বাংলাদেশের শরণার্থীদেরই নয়- আসামে সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনায় ঘরছাড়া মানুষদেরও পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।

মমতার অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গে এসে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়েছেন। এজন্য মোদীকে গ্রেফতারের দাবি তোলেন তিনি৷ রোববারও নদীয়ায় দাঁড়িয়ে ঐক্যের বার্তা দিয়ে সাফ জানিয়ে দেন তিনি, কে অনুপ্রবেশকারী, কে শরণার্থী তা ঠিক করার কোনো এক্তিয়ার নরেন্দ্র মোদীর নেই৷

নির্বাচন কমিশনের কাছে মমতা দাবি তোলেন, যিনি দেশে জাতি ভেদাভেদ করছেন, দাঙ্গা লাগানোর উসকানি দিচেছন, তাকে দেশের স্বার্থে, বাংলার স্বার্থে এখনই গ্রেফতার করতে হবে৷

শুধু তাই নয়, মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে মমতা জানিয়ে দিয়েছেন, এ রাজ্যে সবাই একসঙ্গে থাকবে৷ হিন্দু হোক, মুসলিম হোক, বিহারি, শিখ, মাড়োয়ারি সবাইকে বুকে করে রাখবেন তিনি৷ মমতা জানান, কারও একজনের গায়ে হাত দিয়ে দেখাক তিনি। অনুপ্রবেশকারী-শরণার্থী বলে কাকে ছোট করছেন মোদী ? তারা সবাই ভারতীয় নাগরিক৷ এই দেশ তাদের৷

মমতার আক্ষেপ, বাংলায় এসে যে মাটিতে দাঁড়িয়ে মোদী বাঙালি বিতাড়নের কথা বলছেন, সেই মাটি রবীন্দ্র-নজরুলের মাটি৷ অথচ, সিপিএম তার বিরুদ্ধে একটা কথাও বলছে না৷ দলের পতাকা বিক্রি করে দিয়েছে বিজেপির কাছে৷ তাই মুখ বন্ধ করে বসে রয়েছে সবাই৷

অবশ্য রোববার পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া ও আসানসোলের জনসভায় মোদী সুর নরম করে বলেন, ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতিতে যে সমস্ত অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিরা এ রাজ্যে আসছেন, তাদের তাড়ানো হবে৷ আর শরণার্থীদের সম্মান জানানো হবে৷

কারা শরণার্থী আর কারা অনুপ্রবেশকারী, তা নিয়েও ব্যাখ্যা দেন মোদী৷ মোদীর এমন বক্তব্যের পরই রাণাঘাট ও কৃষ্ণনগরের জনসভা থেকে মোদীর সমালোচনা করে মমতা বলেন, এতো বড় স্পর্ধা যে, বলেন তাড়িয়ে দেব! কতো বড় নেতা! বলছেন, সংখ্যালঘুদের থাকতে দেবো না৷ একটা লোকের গায়ে হাত দিয়ে দেখুন।

মমতা বলেন, কাউকে তাড়াতে দেবো না৷ সবাই বাংলার নাগরিক৷ তিনি বহিরাগত৷ তার এসব কথা বলার কোনো অধিকার নেই৷


মমতা বলেন, কোনো রাজ্য থেকে কেউ যদি সহায়-সম্বলহীন হয়ে পাশের রাজ্যে আসেন, তাহলে রাষ্ট্রসংঘের নিয়ম অনুযায়ী তাকে আশ্রয় দিতে হয়৷ সেটাই নিয়ম৷

নদীয়ার কারবালা ময়দানে রোববারের জনসভায়ও মমতা মোদীকে এ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। মমতা ওই দিন প্রথমে রাণাঘাটে লোকসভার প্রার্থী তাপস মণ্ডল, বিধানসভা উপ-নির্বাচনে চাকদায় রত্না ঘোষ ও শান্তিপুরে অজয় দের সমর্থনে জনসভা করেন৷ সেখান থকে কৃষ্ণনগর যান তিনি৷

আর কারবালায় লোকসভার প্রার্থী তাপস পালের সমর্থনে মমতার সভায় উপচেপড়া ভিড় ছিল৷ জনতাকে উদ্দেশ্য করে মমতা সাফ জানিয়ে দেন, বিজেপি যতোই বিভেদ ছড়ানোর চেষ্টা করুক না কেন, সফল হবে না৷ 
 
বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।