ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

আসামে ‘বাংলাদেশিদের’ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিশেষ সম্মেলন

নব ঠাকুরিয়া | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১১
আসামে ‘বাংলাদেশিদের’ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিশেষ সম্মেলন

গুয়াহাটি: ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ডি-ভোটারদের(আসামে অবৈধ ভাবে বসবাসরত সন্দেহভাজন বাংলাদেশি) নিয়ে আয়োজিত হতে যাচ্ছে এক জাতীয় সম্মেলন। আগামী ৬ তারিখ আসামের সিটিজেনস রাইটস প্রিজারভেশন কমিটির (সিআরপিসি) উদ্যোগে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।



আসামের অবৈধ অভিবাসন সমস্যা নিয়ে এবং সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান ইস্যুতে সম্মেলনটিতে আলোচনা হবে।

সিআরপিসি’র প্রধান উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ এ চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যান, মানবাধিকার কর্মী, সংসদ সদস্য, প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন এবং আলোচনায় অংশগ্রহন করবেন। বলাবাহুল্য, এই বিষয়টি বিভিন্ন দৃষ্টিকোন দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করা হবে এবং বিভিন্ন স্তরের সংকীর্ণতা দূরীকরণেই এ উদ্যোগ। ’
 
হাফিজ রশিদ চৌধুরী আরও বলেন, অবৈধ বাংলাদেশি ইস্যু আসামের জন্য একটি কঠিন বিষয়। কিন্তু গুয়াহাটির হাই কোর্ট ডি-ভোটারদের ভোট দান হতে বিরত থাকার জন্য বলে। নাগরিকত্ব পাওয়ার নিয়ম তোয়াক্কা না করেই আসামে ওই বাংলাদেশিরা নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন। নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করার কারণে ভারত সরকারের পক্ষে আসামের চরমপন্থী সম্পর্কিত সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
 
ভুল বা সঠিক যাই হোক না কেন আসামে প্রায় কয়েক লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছে। তাদের এই উপস্থিতি আসামের অধিবাসীদের পরিচয় সংক্রান্ত ঝামেলায় ফেলছে। যদিও এই শংকা কিছুটা কাল্পনিক এবং কিছুটা বাস্তব। বাস্তবিক অবস্থার প্রেক্ষিতেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে বলে জানান সিআরপিসি’র প্রেসিডেন্ট নৃপেন্দ্র চন্দ্র সাহা।

তিনি আরও বলেন, ১৯৮৫ সালের ১৪ আগস্ট এজিপি সরকারের মাধ্যমে আসাম চুক্তি সম্পন্ন হলে এই অবৈধ অভিবাসন বিষয়টি দৃশ্যত শেষ হয়। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসন বিষয়টি আসামের সাধারণ জনগণের মন থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কিন্তু ১৯৯১ সালে, আসমের মূখ্য মন্ত্রী হিতেশওয়ার সাইকিয়া সংসদে বলেন যে, ৩০ লাখ বাংলাদেশি গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে আসমে এসেছে। কিন্তু ইউনিয়ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত সাইকিয়ার দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন যে, ভারতে ৫০ লাখ বাংলাদেশি আছেন।

উল্লেখ্য যে, সিআরপিসি ১৯৭৯ সালে অন্ধ স্বদেশ ভক্তির বিরুদ্ধে অবস্থার নেওয়ার ভেতর দিয়ে জন্ম নেয়। একই সঙ্গে তারা আসামে বিভিন্ন নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠির অবস্থান নিয়েই লড়াই করে। এই সকল ইস্যু নিয়ে কমিটিটি বিভিন্ন সভা, সংবাদ সম্মেলন, প্রকাশনা এবং সাধারণ জনগণকে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার সম্পর্কে বুঝাবার জন্য কাজ করে আসে।

অভ্যন্তরীন জাতিগত দাঙ্গার অভিজ্ঞতা আসাম এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর রয়েছে। প্রায়শই তারা সন্ত্রাসবাদ এবং বিদ্রোহীদের নিয়ে উত্তেজনাকর অবস্থায় পরে। এছাড়াও সেখানে প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং দুর্নীতির কারণে আলোচনার কোনো উপযুক্ত ক্ষেত্রই তৈরি হচ্ছে না। এই অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিরতা শুধৃু ভারতের জন্যই নয় পার্শ্ববর্তী আরও চারটি দেশের জন্য সমান চিন্তার বিষয়। আর তাই পাশ্ববর্তী ওই দেশগুলোতেও এই অবৈধ অভিবাসন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।
 
পাকিস্তান এবং ভারতে স্বাধীনতার সন্ধিক্ষণেই আসাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সিলেট। সংখ্যালঘিষ্ঠদের সাংস্কৃতিক অধিকার এবং পুনঃসীমানা নির্ধারণ করে নতুন রাজ্য তৈরি করা হয়। আর এই ভাগের ফলে নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠির খন্ডায়ণ, নাগরিকত্বের অধিকার রদ এবং নির্বাসন প্রক্রিয়া চালু হয়ে যায়। এই বিভাজনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার সামঞ্জস্যতা আনার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এতো কিছু করেও শান্তি এবং উন্নতির কোনোটাই এ অঞ্চলে আসেনি।

এটা ঐতিহাসিকভাবেই সত্যি যে, আসামে অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ভাষাভাষি গোষ্ঠি এবং নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠি বসবাস করে আসছে। এটি যেন ভারতেরই একটা ক্ষুদ্র রূপ। ভারতের অন্য কোনো রাজ্যেই ভাষাভিত্তিক জনগোষ্ঠি সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। আসামে একটি মাত্র বৃহত গ্রুপ আছে এবং তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
সিআরপিসি প্রেসিডেন্ট বলেন, এই সমস্যা সমাধানে ভারতীয় নাগরিক এবং পার্লামেন্টকে এগিয়ে আসতে হবে। ইন্দো-বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া কোনো কাজের কথা হতে পারে না। ছবি সম্বলিত পরিচয়পত্র এবং জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনই পারে এ সমস্যা সমাধানের রাস্তায় নিয়ে আসতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।