কলকাতা: অর্ধেকের বেশি চিকিৎসক গরহাজির থাকায় কলকাতার ফুলবাগানের বি সি রায় শিশু হাসপাতালে ১২ ঘণ্টায় ১৩টি শিশুর মৃত্যু ঘটলো দীপাবলির আনন্দে।
মঙ্গলবার রাতে ৭ জন, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৬ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা তো দূর, বরং হাসপাতালের পরিবেশে আতঙ্ক তাদের গ্রাস করে নিয়েছে।
এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত অবশ্য ১০টি পরিবার তাদের দুধের শিশুকে অন্যত্র চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নিয়ে গেছেন। বেশির ভাগ শিশুরই মৃত্যু হয়েছে নিউমোনিয়া, ডায়েরিয়া ও সেপ্টিসেমিয়ায়।
কিন্তু চিকিৎসা চলছে কি? তার উত্তরই বা কে দেবে? হাসপাতালে ২২ জন চিকিৎসকের মধ্যেই ১৩ জন অনুপস্থিত। হাসপাতালের সুপার একই কথা বলে চলেছেন, কম ওজনের শিশু, সংক্রমণে মারা গেছে। হাসপাতাল কী করবে?
উল্লেখ্য, এর আগে জুলাই মাসে ৩৬ ঘণ্টায় ২৩টি শিশুর মৃত্যু হয়েছিলো এ হাসপাতালেই। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি খোদ স্বপারিষদ একবার অন্তত হাসপাতালে এসেছিলেন। কিন্তু বাড়িতে কালীপূজোর জেরে এদিন মুখ্যমন্ত্রীও আর শিশু হাসপাতালে যাওয়ার সুযোগ পাননি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর থেকে শুরু হয়েছিলো মৃত্যুর শীতল ছোবল। কর্তৃপক্ষ সেটাকে চাপা দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু বাদ সাধলো বুধবার সকালে কৈখালির ছয় মাসের আবির ম-লের মৃত্যু। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ভালো থাকা ছোট্ট আবিরের মৃত্যুকে পরিবারে সঙ্গে হাসপাতালে উপস্থিত লোকজনও মানতে পারছিলেন না।
একটা পর্যায়ে শুরু হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বচসা। বন্ধ করে দেওয়া হয় নারকেলডাঙা মেইন রোড। এরপর থেকে আরও পাঁচ শিশুর মৃত্যুর পর রোগীর পরিবারের মানসিক যন্ত্রণা ক্ষোভ আটকাতে পারেনি হাসপাতালে উপস্থিত পুলিশের দল।
এদিন অবশ্য পুরানো বুলি আওড়েই নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন শিশু হাসপাতালের সুপার ডা. দিলীপ পাল। ‘দিনে ৫/৬ শিশুর মৃত্যু একটা রেগুলার ফিচার’। এই বাণীকে আশ্রয় করে নিজেদের অকর্মণ্যতাকে ঢাকার প্রয়াস সারাদিন ধরে চালিয়ে গেলেন হাসপাতালের অধ্যক্ষ থেকে সুপার।
মাত্র ১২ ঘণ্টায় কি করে ১৩টি শিশুর আচমকা মৃতু্যু ঘটলো তার খোঁজ করার বদলে গালভর্তি কথাই বলতে দেখা গেল হাসপাতাল সুপার ডা. পালকে। তিনি এদিন কোন ওয়ার্ডের কোন শিশু রোগী মারা গেছেন তার তালিকা পর্যন্ত রাত অবধি তৈরি করতে পারেননি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১১