কলকাতা: রামদেবের আশ্রমে চিকিৎসা নিতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া বাংলাদেশি কিশোর বিশ্বকান্তি ভট্টাচার্যের অনুসন্ধানে উত্তরকণ্ডের হরিদ্বার থেকে উত্তরপ্রদেশের লখনৌতে গেছে ভারতীয় পুলিশের তিন সদস্যের একটি বিশেষ দল।
হরিদ্বার পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার পুস্কর সিং সেলালের একটি চিঠি নিয়ে অনুসন্ধান দল লখনৌ পুলিশের সিনিয়র পুলিশ সুপার ডিকে ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করেন।
লখনৌ পুলিশের একটি সূত্র বৃহস্পতিবার বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
পুলিশের ওই সূত্রটি জানায়, সম্ভবত কিডনি পাচারকারী দলের খপ্পড়ে পড়েছে বিশ্বকান্তি। লখনৌ পুলিশ আরও জানতে পারে, কয়েকদিন আগে লখনৌতে একজন বাংলাদেশি কিশোরকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। তবে সে-ই বিশ্বকান্তি কীনা তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে গত আগস্ট মাসের কোনও এক সময় নিখোঁজ হয় বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের বিশ্বকান্তি ভট্টাচার্য।
ছেলে হারানোয় পাগলপ্রায় হয়ে বাংলাদেশের নাগরিক ব্যোমকেশ ভট্টাচার্য ভারতের উত্তরখণ্ডে গিয়ে বিভিন্নস্থানে দেনদরবার করছেন। তিনি গত সপ্তাহে উত্তরখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ভুবন চন্দ্র খান্দুরির সঙ্গে দেরাদুনে গিয়ে দেখা করেন।
বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের কাজলধরা গ্রামের বাসিন্দা ব্যোমকেশ ভট্টাচার্য আগস্ট মাসের কোনও এক সময় ভারতে তার ১৭ বছর বয়সী পুত্র বিশ্বকান্তি ভট্টাচার্যকে হারিয়ে ফেলেন। সেসময় অবশ্য তিনি ভারতে ছিলেন না, তার স্ত্রী ছিলেন পুত্রের সঙ্গে।
ব্যোমকেশের পুত্র বিশ্বকান্তি ভট্টাচার্য একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন কিশোর (মানসিক প্রতিবন্ধীদের সম্মান জানিয়ে তাদের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বলা হয়)।
ব্যোমকেশ, তার স্ত্রী সঞ্চিতা এবং পুত্র বিশ্বকান্তি ও এক কন্যা চলতি বছরের জুলাই মাসের ৮ তারিখে ভারতে যান। তারা আওরঙ্গাবাদে পাতঞ্জলিতে ‘বাবা রামদেব’র আশ্রমে গিয়েছিলেন।
স্ত্রী সঞ্চিতা ও পুত্রকে রেখে ব্যোমকেশ ও তার কন্যা কয়েকদিনপর বাংলাদেশে আসেন। এর আগে তাদের পুত্রকে বাবা রামদেবের আশ্রমে ‘ইয়োগা’র একটি কোর্সে ভর্তি করান। স্ত্রী ও পুত্রকে রামদেবের আশ্রমের তত্ত্বাবধানে আওরঙ্গাবাদের একটি ভাড়া বাড়িতে রেখে আসা হয়।
আগস্ট মাসের ৬ তারিখে তাদের দেশে ফিরে আসার দিন নির্ধারিত ছিল। তবে ওই সময় তারা আসেননি। উৎকণ্ঠায় পড়ে যান ব্যোমকেশ। টেলিফোনে সঞ্চিতা জানান তাদের পুত্র নিখোঁজ হয়েছে।
কি করবেন তা ঠিক করতে করতেই স্ত্রী সঞ্চিতা ভট্টাচার্য মৌলভীবাজারে ফেরেন সেপ্টেম্বর মাসের ২৩ তারিখে।
পুত্রকে রামদেবের আশ্রমে ইয়োগা সেসনে নেওয়ার বাইরেও তারা আশপাশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরতে যান। এভাবে কয়েকদিনের মধ্যে তারা লখনৌ, বারানসি, মথুরা ও হরিদ্বারে যান। হরিদ্বারেই কোনও এক স্থানে সঞ্চিতা তাদের পুত্র বিশ্বকান্তিকে হারিয়ে ফেলেন।
ব্যোমকেশ পুরো বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খোঁজ করতে বলে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়ে ব্যোমকেশের পুত্রের ব্যাপারটি নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে জানায়।
নয়াদিল্লি হাইকমিশন থেকে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে হাইকমিশনকে জানানো হয়।
ব্যোমকেশ এরপর ডিসেম্বর মাসের শুরুতে আবারও ভারতে যান।
নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে এরইমধ্যে উত্তরখণ্ডের পুলিশ ও মুখ্যমন্ত্রীকে পত্র লেখে। সে অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী ভুবন চন্দ্র খান্দুরির সঙ্গে দেখা করেন। এছাড়া উত্তরখণ্ডের হরিদ্বারের সিনিয়র পুলিশ সুপারিন্ডেন্ট পুস্কর সিং সেলালের সঙ্গে গত শুক্রবার ব্যোমকেশের সাক্ষাৎ হয়।
হাইকমিশনের ওই কর্মকর্তা জানান, হরিদ্বারের রানিপুর থানার উপ-পরিদর্শক জলিল আহমেদ বিষয়টির তদন্ত করছেন।
ব্যোমকেশের পুত্রের ব্যাপারে তথ্য জানতে হরিদ্বার পুলিশের পক্ষ থেকে ভারতের সবগুলো থানাতেই তথ্য পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১১