কলকাতা: সম্প্রতি জিটিএ চুক্তি কার্যকর না হওয়ার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন দার্জিলিং পাহাড়ের মোর্চার শীর্ষ নেতারা। এবার তাদের সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার উত্তরবঙ্গ সফরের প্রথম দিনে শিলিগুড়িতে ঐক্য আর উন্নয়নের ডাক দিলেন মমতা ব্যানার্জি।
এদিন রোশন গিরি, হরকাবাহাদুর ছেত্রীর মতো মোর্চার শীর্ষ নেতাদের পাশে বসিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের মধ্য দিয়ে পাহাড়-সমতলকে ভালবাসব।
আরও বলেন, পাহাড় ও সমতলকে কোনওভাবেই বিচ্ছিন্ন হতে দেব না।
বাম আমলে উত্তরবঙ্গ নানা ক্ষেত্রে অবহেলিত হয় বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, একটু সময় লাগবে। কিন্তু পর্যটন, চা-সহ একাধিক শিল্পকে নিয়ে তৈরি হবে মাস্টার প্ল্যান। আসবে কর্মসংস্থানের জোয়ার।
এদিন, কোচবিহারে রাজবংশী অ্যাকাডেমি, মাটিগাড়ায় আইটি হাবসহ ৯টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
রেঙ্গি বাজার ও কালিঝোড়ায় ন্যাশনাল হাইডাল পাওয়ার প্রজেক্ট, তিস্তার পাড়ে ৭৫ একর জমিতে ফিল্ম সিটি, রঙ্গিত ও তিস্তা নদীর উপর ২ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প,পিপিপি মডেলে ৬টি মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, ইএসআইকে পাঁচ একর জমি। তৈরি হবে ১০০ শয্যার হাসপাতাল। ৬ জেলায় নতুন ১২টি কলেজ। ১১টি আইটিআই ও পলিটেকনিক কলেজ। ৪০২টি স্কুলকে উন্নীতকরণের কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ পেতে, দার্জিলিং ও কোচবিহারকে যাতে অনগ্রসর জেলা হিসেবে ঘোষণা করা যায় তার জন্য তিনি কেন্দ্রের কাছে দরবার করেছেন।
এদিন তিনি উত্তরবঙ্গের ৬ জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে শিলিগুড়ি দীনবন্ধু মঞ্চে বৈঠক করেন। বৈঠকে ছিলেন ১৮টি দফতরের মন্ত্রী ও সচিবরা।
বৈঠকে সরকারি প্রকল্পের সুফল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিডিও-দের গ্রামে যাওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে গ্রামে ক্যাম্প করে সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে মানুষকে জানানোর নির্দেশ দেন তিনি। জোর দেন পর্যটন, চা শিল্পের উন্নয়ন ও ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের বাস্তবায়নে।
এরপর শুক্রবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে উত্তরবঙ্গ উত্সবের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন রোশন গিরিসহ অন্য মোর্চা নেতারা। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি রাজ্য ভাগ চান না।
উত্তরবঙ্গ উত্সবের মঞ্চে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বঙ্গসম্মান প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদের মধ্যে আছেন পাহাড়ের বিশিষ্ট সাহিত্যক ইন্দ্রবাহাদুর রাই, রবীন্দ্র গবেষক অশ্রুকুমার শিকদার, নাট্য ব্যক্তিত্ব হরিমাধব মুখোপাধ্যায় এবং অ্যাথলিট হরিশঙ্কর রায়। এই সম্মননায় ক্রেস্টের পাশাপাশি আর্থিক পুরস্কারও দেওয়া হয়।
এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই প্রথমবার এই সন্মান প্রাপকদের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রাপকদের মধ্যে চারজনই উত্তরবঙ্গের। এ তালিকায় নাট্য ব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী, কবি জয় গোস্বামী, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী, সন্ধা রায়, গায়ক ও সুরকার অঞ্জন দত্ত, নচিকেতা প্রমুখের নাম নাম রয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও এদিন সত্তরটি ক্লাবকে অনুদান দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১২