নয়াদিল্লি : শুরু হয়েছে ভারতের ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোট গণনা। ভোট গণনার ভিডিওগ্রাফিও করছে নির্বাচন কমিশন।
প্রতি রাউন্ডে অন্তত ২টি ইভিএমের পুণগণনা মাইক্রোঅবজারভাররা করছেন বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে।
কমিশন জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের ৪০৩টি বিধানসভা আসনের জন্য ৭২টি গণনাকেন্দ্র রয়েছে। উত্তরাখণ্ডে ৭০টি বিধানসভা আসনের জন্য ১৬টি গণনাকেন্দ্র রয়েছে। পাঞ্জাবে বিধানসভা আসনের সংখ্যা ১১৭। এ ১১৭টি আসনের ভোটগণনার জন্য ৫২টি গণনাকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে।
গোয়ার ৪০টি বিধানসভা আসনের জন্য ৩টি গণনাকেন্দ্র রয়েছে। মণিপুরে ৬০টি বিধানসভা আসনের জন্য ১২টি গণনাকেন্দ্র রয়েছে।
৫ রাজ্যের মধ্যে সকলের নজর উত্তরপ্রদেশে। সেখানে কে মসনদে বসবে, তার দিকেই নজর গোটা দেশের। ২০১৪-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে `সেমিফাইনাল` বা `মিনি সাধারণ নির্বাচন` বলেছে রাজনৈতিক মহল।
৫টি রাজ্যের মোট ৬৯০টি আসনের প্রার্থীদের ভাগ্য পরীক্ষার ফলাফল জানা যাবে মঙ্গলবার । কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফলাফলের ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। কোন রাজ্যে তখতে কে- জাতীয় দল না আঞ্চলিক আনুগত্য। স্পষ্ট হয়ে যাবে সন্ধ্যার আগেই।
বিধানসভা ভোট নেওয়া এই ৫ রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। সেখানে মোট আসনসংখ্যা ৪০৩টি। পাঞ্জাবে ১১৭টি, গোয়ায় ৪০টি, মণিপুরে ৬০টি এবং উত্তরাখণ্ডে ৭০টি বিধানসভা আসনে ভোট নেওয়া হয়েছে।
অবধের নবাবি আমল অতীত. কিন্তু লখনউয়ের তখত এখনও বহু কাঙ্খিত। সবার নজর মুখ্যমন্ত্রীর গদির দিকে। আসন সংখ্যার নিরিখে দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে দুই প্রধান জাতীয় দলের হাল দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল।
দুই দশকের ওপর লখনউয়ের গদিচ্যুত কংগ্রেস। ২০০২-এর পর থেকে বিজেপিও উত্তরপ্রদেশে কার্যত দিশাহীন। মায়াবতীর হাতি, আর সমাজবাদী পার্টির সাইকেলের চাপে হাত আর পদ্মফুল কোণঠাসা। এই পরিস্থিতিতে ২০১২-র বিধানসভা নির্বাচনেও এই দুই জাতীয় দলের একার ক্ষমতায় উত্তরপ্রদেশের গদি দখল করার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।
বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলের বুথ ফেরত সমীক্ষা থেকে অন্তত এমনটাই ইঙ্গিত মিলছে। সেইসঙ্গে ইঙ্গিত মিলছে- জাত ও ধর্মের অবিশ্বাস্য সমীকরণ বিশ্বাসযোগ্য করে ২০০৭ এ ক্ষমতা দখল করা মায়াবতী এবার উৎখাত হতে পারেন রাজপাট থেকে।
ছেলে অখিলেশের `সাইকেলে সওয়ার` হয়ে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করতে পারেন মুলায়ম সিংহ যাদব।
তবে এক্ষেত্রে অন্য কারও সমর্থন দরকার হতে পারে তাঁর সমাজবাদী পার্টির। একনজরে দেখে নেওয়া যাক বিভিন্ন চ্যানেলের বুথ ফেরত সমীক্ষা কী বলছে-
স্টার আনন্দ-নিয়েলসেনের যৌথ বুথ ফেরত সমীক্ষা
এই যৌথ অনুযায়ী ৪০৩ আসন বিশিষ্ট উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি পেতে পারে ১৮৩টি, বহুজন সমাজ পার্টি পেতে পারে ৮৩টি, কংগ্রেস-আরএলডি জোট ৬২টি, বিজেপি ৭১টি এবং অন্যান্যের ঝুলিতে যেতে পারে ৭টি আসন।
হেডলাইন্স টুডের বুথ ফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী- সমাজবাদী পার্টি ১৯৫-২১০টি আসন পেতে পারে। ৮৮-৯৮-এ নেমে আসতে পারে মায়াবতীর দল, কংগ্রেস ৩৮-৪২টি এবং বিজেপি ৫০-৫৬টি আসন পেতে পারে।
ইন্ডিয়া টিভি-সি ভোটারের বুথ ফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী- ১৩৭-১৪৫টি আসন পেয়ে এক বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে সমাজবাদী পার্টি। বিএসপি পেতে পারে ১২২ থেকে ১৩০টি আসন। বিজেপি ৭৯-৮৭টি এবং কংগ্রেস-আরএলডি জোট ৩৯-৫৫টি আসন পেতে পারে।
নিউজ ২৪-টুডেজ চাণক্যর যৌথ বুথ ফেরত সমীক্ষা অনুযায়ী, মুলায়ম সিংহ যাদবের দল পেতে পারে ১৮৫টি আসন। মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বহুজন সমাজপার্টি, পেতে পারে মাত্র ৮৫টি আসন। কংগ্রেস ও বিজেপি দু’দলই ৫৫টি করে আসন পেতে পারে। অন্যান্যের ঝুলিতে যেতে পারে ২৩টি আসন।
সব চ্যানেলের বুথ ফেরত সমীক্ষা থেকেই ইঙ্গিত মিলছে- উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতার অলিন্দ থেকে মায়াবতীর বিদায় আসন্ন। মুলায়মের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাও অত্যন্ত জোরালো। তবে ম্যাজিক ফিগার ২০২ ছুঁতে না পারলে সেক্ষেত্রে সরকার গড়তে কংগ্রেসকে প্রয়োজন হবে মুলায়মের।
পাশাপাশি বুথ ফেরত সমীক্ষা ঠিক হলে বিহারের মতো উত্তরপ্রদেশেও রাহুল ম্যাজিক নিষ্ফল হবে। চতুর্থস্থানেই থেকে যাবে কংগ্রেস। তাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে কংগ্রেসের মিশন ২০১৪-ও বড়সড় ধাক্কা খাবে।
বুথফেরত সমীক্ষা মোতাবেক ৫ রাজ্যের ভোটের ফলাফলে দাদা ম্যাজিক দেখার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু দিদি ম্যাজিক? অভিষেকেই কি চমকে দিতে সফল হচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি।
উত্তরটা আগেই দিয়ে দিয়েছেন মণিপুরবাসী। মঙ্গলবার সেই রিপোর্ট কার্ড হাতে মিলবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই সমস্যাসঙ্কুল রাজ্যটিতে এবারই প্রথম বিধানসভা ভোটে লড়েছে মমতার তৃণমূল।
প্রচারে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তনের কাণ্ডারী মমতা নিজে। লড়েছেন কেন্দ্রের জোট শরিক, ইউপিএ-র বড়দা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। অ-কংগ্রেসীদের নিয়ে বৃহত্তর মঞ্চ গড়ে (পিপল’স ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স বা পিডিএ)। মমতার যে লড়াইয়ের সঙ্গ দিয়েছেন শারদ পওয়ারের এনসিপিসহ বামেরাও!
মণিপুরে ভোটের দিন জঙ্গি হামলা হয়েছিল. তাই মঙ্গলবার গণনার দিন কোনও ঝুঁকি নেয়নি প্রশাসন-কমিশন। গণনা কেন্দ্রগুলিতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
ভোট-পণ্ডিতরা (বুথফেরত সমীক্ষা) রায় দিয়েছেন, হিন্দিবলয়ে সর্বস্ব পণ করলেও রাহুল ম্যাজিক শেষমেশ ব্যর্থই হচ্ছে। তবে মণিপুর নিয়ে তাঁদের মত, জঙ্গি অধ্যুষিত ওই রাজ্যে ফের ক্ষমতায় ফিরছে কংগ্রেসই। হ্যাটট্রিক করছেন মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি সিংহ।
কেন আবার ইবোবি? আসলে বহু মণিপুরবাসীর যুক্তি দল কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছে, সেই একই দলের রাজ্য শাসনের দায়িত্বে থাকা উচিত।
অন্যদিকে, বুথফেরত সমীক্ষা এও বলছে, প্রথমবার ভোটযুদ্ধে নেমে ভাল ফল করছে তৃণমূলও। তাদের ঝুলিতে যেতে পারে ১৩টি পর্যন্ত আসন। মমতার দল এ রাজ্যে ৬০ আসনের বিধানসভায় লড়েছে মোট ৪৭টিতে।
মণিপুর পিপলস পার্টি ছেড়ে অনেকেই এ বার দিদির দলের প্রার্থী হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলেছেন, প্রতীক বা দল নয়, তৃণমূলের ঝোলায় বেশিরভাগ আসন যেতে পারে প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ইমেজে ভর করে।
২০০৭-এর বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস পেয়েছিল ৩০টি আসন। মণিপুর পিপলস পার্টি ৫। সিপিআই ৪। নির্দল ১০ এবং অন্যান্যরা ১১টি আসন পেয়েছিল। ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় ভোটযুদ্ধে জয়লাভের ধারা যে এ রাজ্যে বহমান, তা ওই নির্বাচনে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। এবার সত্যিই কী হবে- জানতে বাকি আর কয়েক ঘণ্টা।
ভারতীয় সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১২