ঢাকা: ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে লিফট ও এস্কেলেটরের অতিরিক্ত শুল্ককে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ উল্লেক করে অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ এলিভেটর, এস্কেলেটর অ্যান্ড লিফট ইস্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলিয়া)।
বুধবার (১৪ জুন) রাজধানীর বনানীতে বুয়েট গ্রাজুয়েট ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ এলিভেটর, এস্কেলেটর অ্যান্ড লিফট ইস্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বেলিয়া) সভাপতি এমদাদ উর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম উজ্জলসহ এলিভেটর, এস্কেলেটর ও লিফট সরবরাহকারী ও আমদানিকারকরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনা পরবর্তী ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিগ্রহ, মুদ্রাস্ফীতি, স্থায়ী মন্দা, বিভিন্ন দেশে মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে লিফট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এরপরেও গত অর্থ বছরে লিফটের ওপর ৫% শুল্ক বৃদ্ধি করায় আমদানিকারকদের আরও বেগতিক অবস্থায় পড়তে হয়েছে।
গত অর্থ বছরে লিফটকে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়, যার রেশ কাটতে না কাটতেই ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটে আবারও ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ক্যাটাগরি থেকে অবমুক্ত রেখেই বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান মোট শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে সর্বমোট ২৫.৭৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং এস্কেলেটরকে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ক্যাটাগরি থেকে অবমুক্ত করে আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান মোট শুল্ক ১১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে সর্বমোট ৪৩ শতাংশ করা হয়েছে।
গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সরকারের বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পের লিফট এবং এস্কেলেটরের বর্তমানে চলমান হাতে নেও কার্যাদেশের মূল্য প্রায় ৪০০-৫০০ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতে যা ১২০০-১৫০০ কোটি টাকা। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিভিন্ন ব্যাংকে ডলার/ইউরোর মুদ্রা বিনিময় মূল্যের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা কার্যকরী না থাকায় ডলার/ইউরোর অনিয়ন্ত্রিত মূল্য এবং ১০০% মার্জিনে এলসি খুলতে এমনিতেই সরবরাহকারী/আমদানিকারকদের নাভিশ্বাস। তার উপর বাজেটে প্রস্তাবিত অতিরিক্ত শুল্ক যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। অতএব এই শিল্পের সুরক্ষার্থে গত বছরের কার্যাদেশের ওপর পূর্বের বাজেটের নিয়মানুযায়ী শুল্ক/কর বহাল রাখতে সরকারের সুবিবেচনার জন্য অনুরোধ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা বিক্রয় পর্যায়ে সরবরাহের বিপরীতে ভ্যাট প্রদান করে থাকি। সরকার লিফট উৎপাদনকারীদের ২০২৫ সাল পর্যন্ত ভ্যাট মওকুফের ঘোষণা দিয়েছে। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বাজেটে আমদানি শুল্ক ও কর অনুযায়ী দেশীয় উৎপাদনকারীরা লিফটের যন্ত্রাংশে ১% আমদানি শুল্ক দেন। উৎপাদনকারীরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে জাহাজ ভাড়ার সুবিধা, আমদানি করের সুবিধা এবং সরবরাহের বিপরীতে ভ্যাট সুবিধায় সম্পূর্ণ তৈরি লিফট আমদানিকারকদের থেকে ২৫% কম মূল্যে বিক্রি করতে পারেন। ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূর্ণ তৈরি লিফট আমদানি শুল্ক আবারো ১০% বাড়ানোর কারণে সম্পূর্ণ প্রস্তত আমদানি লিফট ও দেশীয় শিল্পে উৎপাদিত লিফটের দামের পার্থক্য হবে ৩৭%, যা যারপরনাই অসম।
আমদানিকারকরা আরও বলেন, আমাদের শিল্পের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে লিফট এবং এস্কেলেটর সরবরাহকারীদের দ্বারা পালন করা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বিবেচনা করে আমদানি নির্ভরতা থেকে বের হয়ে স্থানীয় শিল্প গড়ে তোলার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন নীতিমালা প্রনয়ণ এবং সেই আলোকে আবকাঠামো প্রস্তুত করা।
উপরোক্ত যৌক্তিক ও মানবিক দিক বিবেচনাসাপেক্ষে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মোতাবেক পদক্ষেপ নিলে বিগত ৫০ বছরে অর্জিত সক্ষমতার আলোকে বাংলাদেশকে একটি টেকসই লিফট শিল্প উপহার দেওয়া সম্ভব হবে, যা বাংলাদেশের মাঝারি শিল্প তথা উন্নয়নকে করবে আরও বেগবান।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশে লিফট স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা এখন সময়ের দাবি বলে জানিয়ে বাংলাদেশ এলিভেটর, এস্কেলেটরস অ্যান্ড লিফট ইস্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বেলিয়া) সরকারের সাথে একযোগে আমদানি নির্ভর সেক্টরের বিকল্প পন্থা উদ্ভাবন, সেফটি এবং স্ট্যান্ডার্ড নীতিমালা প্রণয়ন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রণয়নে একযোগে কাজ করতে বদ্ধপরিকর।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
এমজেএফ