বরিশাল: আর্থিক সংকট, মূল্য কমসহ নানা অজুহাতের মধ্য দিয়ে বরিশালে চলছে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ। তবে এবারে কোনো আড়তেই ছাগলের চামড়ার দেখা মেলেনি এ অব্দি।
মাঠপর্যায়ে চামড়া সংগ্রহকারীরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা ফ্রিতেও না নেওয়ায় এবারে গোড়া থেকেই ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেননি তারা। আর চামড়ার ব্যবসায়ীরা বলছেন, খরচ পুষিয়ে না ওঠা এবং ট্যানারির ব্যবসায়ীরাও অনীহার কারনে বিগত বছরগুলোতে ফ্রিতে পাওয়া চামড়াগুলোও ফেলে দিতে হয়।
বরিশাল নগরের চামড়া ব্যবসায়ী হাজী বাচ্চু মিয়া বলেন, আগে একটি ছাগল বা খাসির চামড়া ৩শ থেকে ৪শ টাকায় বিক্রি হত। তখন চামড়া ইতালি ও চীনে রপ্তানি হত। আর সেই চামড়া নিতে এখন ট্যানারি ব্যবসায়ীরাই ছাগলের আগ্রহ দেখান না। ফলে আমরা ছাগলের চামড়া নিতে পারছি না, এক কথায় ছাগলের চামড়ার কোনো দাম নেই।
গত ঈদের সময় পাঁচটি চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, সেই চামড়া এখনো বিক্রি করতে পারেননি। এ কারণে ছাগলের চামড়া কোরবানিতে সংগ্রহই করতে চাই না। তবে গত কয়েকবছর থেকে মাদ্রাসা থেকে গরুর চামড়ার সঙ্গে ফ্রি দিয়ে দেয়। ফ্রিতে পাওয়া চামড়ার পেছনে শ্রমিক খাটিয়ে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে যদিও সেই খরচই না পাওয়া যায় তাহলে তা রেখেও লাভ কী? তাই পরে সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দিয়ে আসতে হয়।
এসব কারণে মাঠপর্যায়ে যারা সংগ্রহ করেন তারাও এবারে ছাগলের চামড়া নেয়নি বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
আর চামড়া সংগ্রহকারী ও নগরের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ফারুক হোসেন বলেন, কয়েকবছর ধরে কষ্ট করে ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীদের কাছে নিয়ে গেলে তারা কোনো মূল্যই দিতে চান না। তাই বিগত সময়গুলোতে গরুর চামড়ার সঙ্গে ছাগলের চামড়া ফ্রিতে রেখে আসতাম।
পশু কোরবানি কম হলেও বিগত সময়ের থেকেএবারে ছাগলের পরিমাণ বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করতে যে কষ্ট ও খরচ হয়, গরুতে তাই হয়, তবে নিজেদের খরচ কমাতে মূল্যহীন ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করিনি। আর শুধু যে আমরা এমনটা করেছি তাও নয়, বরিশাল নগরে যেসব এতিমখানা-মাদ্রাসা চামড়া সংগ্রহ করে তাদের বেশিরভাগেই ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেনি।
নগরের বেলতলা এলাকার জামেয়া মাহমুদিয়া মাদ্রাসার মুফতি আতিকুল্লাহ কাসেমী বলেন, হিসেবে কষলে পৃথকভাবে একটি ছাগলের চামড়া আনা-নেওয়া, পরিবহন ও সংরক্ষণে ২শ টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু বরিশালে যারা চামড়া কিনেন তারা কোন দাম দেয় না। তাই গরুর চামড়ার সঙ্গে আমরাও সেটি ফ্রিতে রেখে আসি ব্যবসায়ীদের কাছে। আমাদের মাদ্রাসায় গত বছরে ২শ’র মতো ছাগলের চামড়া এসেছিল। সেই চামড়ার কোন দামই পাইনি এ অব্দি।
অপরদিকে নবগ্রাম রোডের বাসিন্দা ও বিভিন্ন মাদ্রাসার সঙ্গে সম্পৃক্ত মাসউদ সিকদারের দাবি, সিন্ডিকেট করে ছাগলের চামড়া মুল্যহীন করে রাখা হয়েছে। যেখানে চামড়ার জুতা, বেল্ট, ব্যাগসহ সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী সেখানে চামড়ার দাম কমে গেছে এটা সাধারণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়।
আর স্থানীয় মাদ্রাসা থেকে ছাগলের চামড়া ফিরিয়ে দেওয়ায় তা মাটিচাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগরের আলেকান্দা এলাকার বাসিন্দা সুমন খান।
তিনি বলেন, চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তো হারিয়ে গেছে। এখন বেশিরভাগ চামড়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দেওয়া হয়। তবে এবার তো এতিমখানা, মাদ্রাসাগুলো ছাগলের চামড়া সংগ্রহই করেনি, ফিরিয়ে দিয়েছে। পরে দূষণরোধে সেই চামড়া মাটিচাপা দিয়ে দিয়েছি।
যদিও সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা জানিয়েছেন, ডাস্টবিন ও পশু কোরবানির নির্ধারিত স্থানে বর্জ্যের পাশপাশে এবারে ছাগলের চামড়া পাচ্ছেন তারা।
যদিও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুরুল আলম জানিয়েছেন, স্থানীয় পর্যায়ে দর না পেলে এবার যেন ছাগলের চামড়া যত্রতত্র ফেলে দিয়ে পরিবশে দূষন না করা হয় সেজন্য জেলা প্রশাসকের সঙ্গে পাঁচটি দপ্তরের সভায় নানা দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মানুষকে সচেতন করাসহ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা যেন এসব চামড়া সংগ্রহ করে সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৩
এমএস/এএটি