সোনালী ব্যাংকের সিইও অ্যান্ড এমডি মো. আফজাল করিম বলেছেন, ব্যাংক খাতের বড় চ্যালেঞ্জ খেলাপি ঋণ। এক বছরে এটা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসতে পেরেছি।
আফজাল করিম বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ১৮ শতাংশের বেশি। চলতি বছরের জুন শেষে তা ১৪ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বিগত সময়ে প্রতি বছর খেলাপি ঋণ ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও আমরা কমাতে সক্ষম হয়েছি। সোনালী ব্যাংকে সব সময় আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি ছিল। প্রথমবারের মতো আমরা নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন পজিটিভ করতে সক্ষম হয়েছি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন নেগেটিভ ছিল ৯৭৯ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে এটা ওভারকাম করে নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন পজিটিভ হয়েছে ৩৩৩ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক এমডি বলেন, আমাদের মূলধন ঘাটতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে এ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল প্রায় ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে তা কমে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এক বছরে মূলধন ঘাটতি ২ হাজার কোটি টাকা কমাতে সক্ষম হয়েছি। এটা অর্জন হয়েছে খেলাপি ঋণ কমাতে পেরেছি বলেই।
তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমরা এ লক্ষ্য ইতোমধ্যে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের ব্যাংককেও ডিজিটাল করতে পেরেছি। আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট ব্যাংক ব্যবস্থার জন্য সোনালী ব্যাংক অটোমেশনের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা কিউআর কোডের মাধ্যমে গ্রাহককে টাকা তোলার সুযোগ করে দিয়েছি। চেকের বিকল্প কিউআর কোড স্ক্যান করে সোনালী ব্যাংকের যে কোনো শাখা থেকে তাৎক্ষণিক টাকা উত্তোলন করতে পারছেন গ্রাহক। বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন আহ্বান করেছে। আমরা আবেদন করব। এ ছাড়াও আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলা কিউআর কোডের কমন গেটওয়েতেও যুক্ত হয়েছি। কিউআর কোড স্ক্যান করে যে কোনো আউটলেট থেকে কেনাকাটার পেমেন্ট করা যাচ্ছে। আমাদের আরেকটি বড় কাজ হয়েছে, সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টধারী প্রবাসী ভাইদের অনেক দিনের দাবি ছিল প্রবাসে বসে যাতে অ্যাকাউন্ট পরিচালনা ও লেনদেন কর যায়। আমরা অ্যাপের মাধ্যমে সেই সুযোগ দিয়েছি। বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে সোনালী ই-ওয়ালেট অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী ভাইয়েরা ২৪ ঘণ্টা লেনদেন করতে পারছেন। টাকা ট্রান্সফার, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ও মোবাইল ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করতে পারছেন।
আফজাল করিম বলেন, আমরা গ্রাহকবান্ধব সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আমরা কল সেন্টার চালু করেছি। যা সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম। দেশ-বিদেশ থেকে ১৬৬৩৯ নম্বরে কল করে যে কোনো সময় গ্রাহক সেবা পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য জনবান্ধব ব্যাংক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন। আগামী দিনের স্মার্ট ব্যাংক করার জন্য যা যা দরকার সবই করছি আমরা। সোনালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা এ বছর সর্বোচ্চ হয়েছে। চলতি বছরের শেষে পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। সামগ্রিকভাবে আমাদের ব্যাংকের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, আগামী দিনেও তা অব্যাহত রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় অনেক কর্মসূচি আছে। এর ৩৭টি সেবা সোনালী ব্যাংক বিনামূল্যে দিচ্ছে। এর সুবিধা পাচ্ছে দেশের প্রান্তিক জনগণ।
আফজাল করিম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণের জন্য আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়, আমরা শতভাগ বিতরণ করি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। আমরা তার চেয়ে বেশি, ১০২ শতাংশ অর্জন করেছি। ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আমরা চলতি বছর সারা দেশে ১০০টি উপশাখা খুলব। কম সংখ্যক জনবল দিয়ে সবধরনের ব্যাংকিং সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয়ও অনেক কম হবে। এটা অনেক বেশি কার্যকরী হবে। ৫৮টি শাখার মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এটা পর্যায়ক্রমে অন্য শাখাগুলোতেও চালু করা হবে। তিনি বলেন, সরকারের সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সোনালী ব্যাংক। এর চারটি স্কিমে যারা যুক্ত হতে চান, তারা ইউপেনশন ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করার পর ইউনিক আইডি পাবেন। সেই ইউনিক আইডি দিয়ে তার টাকা জমা দিতে পারবেন। সোনালী ব্যাংকের গ্রাহকরা অনলাইনে সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফার করে জমা দিতে পারবেন। অন্য ব্যাংকের গ্রাহকরা ডেবিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে মাসিক কিস্তির টাকা জমা দিতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২৩