ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়লেও আসছে নতুন চ্যালেঞ্জ: সমীক্ষা 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২৩
পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়লেও আসছে নতুন চ্যালেঞ্জ: সমীক্ষা 

ঢাকা: ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি বেড়েছে।

তবে আগের তুলনায় রপ্তানি বাড়লেও বর্তমান বাস্তবতায় পোশাক শিল্পে নতুন করে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে বলে এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।  

সমীক্ষা অনুযায়ী, নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এবং চীন ভিত্তিক ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, বর্তমান দুর্বল বিশ্ব অর্থনীতি এবং আরেকটি ভবিষ্যৎ মন্দা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে এ খাতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতি বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে তুলেছে।

‘উন্নয়নের বিষয়সমূহ: পোশাক শিল্পে সামগ্রিক গবেষণা ও নারী শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে আসে। দেশের বিজনেস কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লাইট ক্যাসল পার্টনার্স, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে এ সমীক্ষাটি পরিবেশন করে। সমীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যে অগ্রযাত্রা তা এগিয়ে নিতে পোশাক খাতে কি করণীয় ও কী কী বাধা আছে তা চিহ্নিত করা।  

শনিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরা হয়।  

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আবদুছ সামাদ আল আজাদ ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএর) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. এম. মাসরুর রিয়াজ। লাইট ক্যাসল পার্টনার্স থেকে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক জাহেদুল আমিন, সামিহা আনোয়ার, পোর্টফোলিও ম্যানেজার রাদি শফিকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।  

ঢাকা, সাভার, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম এর ৪২টির অধিক গার্মেন্ট শিল্প মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ভারত, কেনিয়া, ব্রাজিল, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশের পোশাক ক্রেতা এবং ৫০ জন নারী কর্মীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সমীক্ষাটি পরিচালনা করা হয়।  

সমীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে পোশাক চাহিদা কমলে এ শিল্পে সংকট আরও ঘনীভূত করবে। এর ফলে অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাতে অনেক নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যেতে পারে।  

এছাড়া এ খাতের নীতিনির্ধারক ও শিল্পপতিদের লক্ষ্য করে ‘বাংলাদেশে পোশাক খাতে ভবিষ্যৎ করণীয়’ শিরোনামে দুটি সংক্ষিপ্ত নীতি তুলে ধরা হয়।  

এতে বলা হয়, বর্তমানে এইচ অ্যান্ড এম ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এবং দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় ‘অপরাজিতা: বাংলাদেশে এই সংক্রান্ত ভবিষ্যৎ কাজে যৌথ প্রভাব’ শিরোনামে একটি দুই বছর ব্যাপী একটি প্রকল্প চালু রয়েছে। যাতে প্রকল্পের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, পোশাক শিল্পে আধুনিক মেশিন স্থাপনের প্রভাব বা পোশাক খাতকে অটোমেশনের ফলে নারী পোশাক কর্মীদের ভবিষ্যৎ জীবিকা সংকটের মুখে পড়তে পারে।  

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। দেশের মোট রপ্তানির ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশই এ খাত থেকে হয়। দেশে চার হাজারের ও অধিক কারখানায় প্রায় ৪০ লাখ লোক জড়িত, যাদের অধিকাংশই নারী। তাই শিল্পের উন্নয়নে ও শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে ন্যায়সংগত মজুরির পাশাপাশি তাদের সুন্দর কর্মপরিবেশ ও শারীরিক সুস্থতার ওপর জোর দেওয়া উচিত।  

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ এ পোশাক খাতকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। এর ফলে অনেক আন্তর্জাতিক আদেশ বাতিল হয়েছে। এতে আনুমানিক ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে। ২০২২ সালে এর প্রভাব কাটানোর জন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছিল তা বিভিন্ন কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এ প্রেক্ষাপটে, এ খাতের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ধাক্কাগুলো সামাল দিতে হবে। এর পাশাপাশি এ শিল্পে গতিশীলতা ও দক্ষতা আনয়নে অটোমেশনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও শ্রমিকদের কাজের সংস্থানের প্রভাবও বিবেচনায় আনা জরুরি।  

এছাড়া সমীক্ষা প্রতিবেদনে, দেশে পরিবেশ সুরক্ষায় টেক্সটাইল বর্জ্যের পুনর্ব্যবহারযোগ্য পদ্ধতির দিকে মনোনিবেশ করা, শ্রমিকদের ন্যায়সংগত মজুরি, বয়স্ক কর্মীদের অন্য পেশায় স্থানান্তর এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির স্বার্থে এ খাতের আর্থিক নীতিগুলো সহজিকরণ ও বাস্তবসম্মতকরণের সুপারিশ করা হয়।  

এতে আরও বলা হয়, এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ খাতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।  

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুছ সামাদ আল আজাদ বলেন, আমাদের এখন থেকেই তুলা-ভিত্তিক পোশাক থেকে মানুষ নির্মিত উপকরণগুলোর মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া হলো দুটি সম্ভাব্য অংশীদার যারা আমাদের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতায় সহায়তা করতে পারে। ইতোমধ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী গত বছরের এপ্রিলে ‘বাংলাদেশ-জাপান শিল্প উন্নীতকরণ প্রকল্প’ নামে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছেন।  

তিনি আরও বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ ও এই অগ্রযাত্রায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ২০২৯ সাল পর্যন্ত অগ্রাধিকারমূলক বাজার অ্যাক্সেসের সুবিধার একটি সম্প্রসারণ হতে চলেছে। এ সম্প্রসারণ নীতি-নির্ধারণকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করবে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য আরও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।  

বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের বর্জ্যের জন্য মাত্র ২/৩টি রিসাইক্লিং সেন্টার রয়েছে। আমরা যদি পুনর্ব্যবহৃত সুতা রপ্তানি করি তাহলে তা থেকে ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পরিবেশ সুরক্ষা বিবেচনায় আমাদের ফাইবার বৈচিত্র্যকরণ সম্পর্কিত নীতি গ্রহণ ও এ সংক্রান্ত উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২৩
এমআইএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।