ঢাকা: নির্বাচনের ঢামাঢোলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বেচা-কেনা বেড়েছে। আগে যেসব দোকানে নির্দিষ্ট ক্রেতারা যেতেন, নির্বাচনী হাওয়া শুরু হওয়ার পর সেখানে ভ্রাম্যমাণ ভোক্তাও বেড়েছে।
নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকেই বেচাকেনা বেশি হওয়ার কথা জানান দোকানিরা। যদিও এরই মধ্যে প্রচারণা শেষ হয়ে গেছে। রাত পোহালেই ভোট। নগরের প্রধান সড়কে তেমন যানবাহন না থাকলেও অলি-গলিতে চলছে আড্ডা। চায়ের দোকানে দোকানে চলছে নির্বাচন বিষয়ক চুক্তি-তর্ক। এতে একদিকে যেমন আলোচনা জমছে, তেমনি বিক্রি হচ্ছে চা-পান ও বিড়ি-সিগারেট।
মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনের চা-দোকানদার আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘হ, চ-পান-সিগারেট বেচা একটু বাড়ছে। তবে আরও বেশি হইতো যদি আরও দল বেশি নির্বাচনে আইতো। তারপরও মাশাল্লাহ। ’
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বেশি থাকায় মিরপুরে ১ নম্বর থেকে গাবতলী পর্যন্ত কর্মী-সমর্থকের বেশি আনাগোনা। এখানে প্রচারণার সময় সমাগমও বেশি দেখা গেছে। গলির মাথায় নির্বাচনী ক্যাম্পের পাশাপাশি গলির দোকানে কর্মীদের সরব উপস্থিতি রয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিক্রিতে।
মাজার রোডের চায়ের দোকানদার আমিরুল বলেন, ‘বেচা তো একটু বাড়ছেই। গত দুইটি নির্বাচন কোন দিক দিয়ে গেছে জানাই যায়নি। এবার দোকানে মানুষের আনা-ঘোনা বেড়েছে। ’ আমিরুলেরও আক্ষেপ, বিএনপিসহ অন্যরা নির্বাচনে এলে ব্যবসা আরও ভালো হতো।
মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে উত্তর দিকের ফুটপাতে সোয়েটার, টুপি, মাপলার বিক্রি করেন আজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শীতে এমনিতেই বেশি বিক্রি হয়। সারা বছর বসে থাকি শীতের দুই মাস বিক্রির জন্য। এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নির্বাচন। ফলে বিক্রি বেশ খানিকটা বেড়েছে। গত সপ্তাহ বেশ ভালো গেছে। তবে শুক্রবার থেকে তিন দিনের ছুটি শুরু হওয়ার কারণে বিক্রি কমেছে। অনেকে বাড়ি চলে গেছে। ’
ফরিদ হোসেন মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনের বাসিন্দা। মিরপুরের একটি মার্কেটে তার দোকানও রয়েছে। একজন প্রার্থীর প্রচারণা চালানো ফরিদ হোসেন বলেন, গত সপ্তাহে সন্ধ্যার দিকে বের হয়ে মাথায় ঠাণ্ডা লেগেছে। বাধ্য হয়ে টুপি কিনেছি। সন্ধ্যায় বাইরে বের না হলে এটা কেনা হতো না। আরও কেনা-কাটা করতে হয়েছে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রচারণার জন্য। নির্বাচণের কারণে এগুলো করতে হয়েছে।
অবশ্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচিতে রাজধানীসহ সারা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শীতের শুরুতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি কাপড়সহ নানা পণ্য ঢাকায় পৌঁছাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। সে সময় পাইকারি কাপড় বিক্রেতারা সংকটে পড়েন। পরে নির্বাচনবিরোধীদের কর্মসূচি স্তিমিত হয়ে এলে পণ্য সববরাহও স্বাভাবিক হয়ে আসে।
নয়াপল্টনের একটি মার্কেটের পাইকারি কাপড় বিক্রেতা আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের ডামাঢোলের কারণে বিক্রি বেড়েছে। শীতের শুরুতে মহাসংকটে পড়েছিলাম। ঢাকার বাইরের ক্রেতাদের জন্য কাপড় রেডি করলেও হরতাল-অবরোধের মুখে পড়ে ক্রেতারা আসতে পারেনি। হরতাল-অবরোধের ফাঁকে ফাঁকে দুয়েকজন ক্রেতা এলেও অর্ডার দিতে ভয় পেতো। অকুল পাথারে পড়েছিলাম। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলে বিরোধী দলের কর্মসূচি শিথিল হয়, ঢাকার বাইরে থেকে ক্রেতারা আসতে থাকেন, যেন হাফ ছেড়ে বাঁচি। এখন বিক্রিতে খুশি। ’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘যদি ব্যবসায়ীরা কাপড় আমদানি করতে পারতো, যদি সব দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারতো, নির্বাচনকেন্দ্রিক ব্যবসা দ্বিগুণ হতো। তারপরও ঢাকায় যেমন বেড়েছে ঢাকার বাইরে আরও বেশি বেড়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৪
জেডএ/এইচএ/