ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাজেটে রাজস্ব বৃদ্ধির একমাত্র খাত তামাকপণ্য: আতিউর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৪
বাজেটে রাজস্ব বৃদ্ধির একমাত্র খাত তামাকপণ্য: আতিউর

ঢাকা: মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এ অবস্থায় ভোগ কমিয়ে জীবন নির্বাহ করার চেষ্টা করছে।

এ অবস্থা আগামী বছরেও অব্যাহত থাকবে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব হবে না। রাজস্ব বাড়াতে তামাকজাত পণ্যের ওপর জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান।

শনিবার (৩০ মার্চ) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুওর (ডরপ) আয়োজিত সাংবাদিক কর্মশালায় প্রধান অথিতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আতিউর রহমান বলেন, তামাক ও তামাকজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব উঠলেই পল্লি অঞ্চলে কর্মসংস্থান হারানোর কথা ওঠে। কিন্তু বর্তমান সরকার সম্পদ স্থানান্তর ও পল্লি অঞ্চলে কর্মসৃজন হওয়ার ফলে বিড়ি কারখানাগুলোতে আর আগের মতো শ্রমিক কাজ করে না। ফসল ফলানো, সবজি চাষ, গরু মোটাতাজাকরণ, হাসমুরগি পালনের মতো কাজে নিয়োজিত হয়েছে। অন্যদিকে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ বেড়েছে।

তিনি বলেন, তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। গাছ কেটে পুড়িয়ে তামাক শুকানো হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশের ক্ষতি করছে, যা সরাসরি মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এজন্য দাম ও শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে সিগারেটকে কম আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে যেতে হবে।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধে আব্দুল্লাহ নাদভি বলেন, চার স্তরে সিগারেটের দাম ও নির্দিষ্ট হারে শুল্কহার বৃদ্ধি করলে বর্তমান করের পাশাপাশি অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বাড়বে। এজন্য নিম্ন স্তরের সিগারেটের দাম ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা এবং সম্পূরক শুল্ক ২৬ টাকা ১০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৭ টাকা ৮০ পয়সা করতে হবে।

এছাড়া মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম ৬৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা; উচ্চ স্তরের সিগারেটের দাম ১১৩ টাকা থেকে ১৩০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেট ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। এর ফরে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সিগারেটের দাম ও শুল্ক বৃদ্ধি করা গেলে ১৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে নামবে। এর মধ্যে ১৫ লাখ মানুষ ধূমপান ছাড়বে এবং ১০ লাখ তরুণ ধুমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। পাশাপাশি ১১ লাখ মানুষের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। আর রাজস্ব বাড়বে ১০ হাজার কোটি টাকা।

বিশেষ অথিতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. শফিউল নাহিন শিমুল বলেন, ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল নাগাদ মানুষের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু সেই হারে সিগারেটের দাম বাড়েনি। বরং দাম বাড়ানো নিয়ে একটি উল্টো অবস্থা তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানির দাম বাড়ালে মানুষ প্রতিবাদ না করলেও সিগারেটের দাম বাড়ালে মানুষ প্রতিবাদ করে।

তিনি বলেন, দাম বাড়ানোর ফলে সিগারেটের ব্যবহার কমে, এটা একটি বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত বিষয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণাতেও এটা পাওয়া গেছে। আর এর ফলে সরকারের রাজস্ব বাড়ে। গাম্বিয়াসহ বেশ কিছু দেশে দেখা গেছে, রাজস্ব আদায়ের একটি সহজ খাত হয়ে গেছে ধূমপান। আগামী বাজেটে বাংলাদেশও এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে।

সভার সভাপতি ও এনসিসি ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল আমিন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর থাকাকালীন সময়ে ড. আতিউর রহমান তামাক চাষ প্রবণ এলাকায় তামাকের বিপরীতে খাদ্যপণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করতে ব্যাংক ঋণ বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। এর ফলে তামাক চাষে ব্যাংকঋণ না দেওয়ার নৈতিক একটি অবস্থান তৈরি করা হয়েছিল। সেটা এখন আরও বেগবান হয়েছে।

কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন ডরপের নির্বাহী উপদেষ্টা আজহার আলী তালুককতার, ইআরএফ-এর সভাপতি রিফায়েত উল্লাহ মৃধা, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।