ঢাকা: রাজনীতিকে রাজনীতির জায়গায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, আমরা আমদানি-রপ্তানি রাজনীতির বাইরে রাখতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেও সম্পর্ক ভালো না।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত টিসিবি ভবনের সামনে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি কথা দিয়েছিলাম পুলিশ দিয়ে নয়, সরবরাহ তৈরি করে পণ্যের দাম কমাবো। এটা এখন প্রমাণিত। আমরা যদি বিকল্প সরবরাহ রাখতে পারি তাহলে চাইলেও দুই-চারজন বাজার ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে পারবে না।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও পেঁয়াজ রপ্তানি করায় ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতে একটি নির্বাচন চলছে, কৃষক আন্দোলন হচ্ছে, তাদেরও ভোক্তা আছে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তারা তাদের কমিটমেন্ট রেখেছে। আমাদের কাউন্টার পার্ট হচ্ছে পীযূষ গোয়েল। তিনি বলেছেন রমজানের মধ্যেই আমরা পেঁয়াজ পাবো। তিনি তার কথা রেখেছেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ। ভারত সরকার এ অনুমতি দেওয়া নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। তারপরও তার চেষ্টায় অনুমতি দিয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক সেই সম্পর্কের কারণেই আমরা পেঁয়াজ পেয়েছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্টক তৈরি করবো। বাজার ব্যবস্থাপনা একটি বিজ্ঞান-অংক। এটি ছক মতো সাজাতে পারলে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। অনেক সময় আমরা চাইলেই পণ্য সরবরাহ করতে পারি না, পাই না।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, পেঁয়াজ একটি পচনশীল পণ্য। এটা আনার ক্ষেত্রে অনেক ঝুঁকি ছিল। ফাইনালি যখন আমরা পেলাম তখনও আমরা একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম যে আমরা এ পেঁয়াজ এনে রোজা শেষ হওয়ার আগে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবো কিনা। আপনারা বিশ্বাসও করবেন না এ পেঁয়াজ দিল্লি থেকে লোডিং হয়ে দর্শনা হয়ে ট্রাকে আজ এখানে আসছে। এটা আনার জন্য অস্বাভাবিক লজিস্টিক প্রয়োজন। যেটা টিসিবি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি পেঁয়াজও নষ্ট না হয়ে দেশে এসেছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে হয়েছে। পেঁয়াজের দাম হঠাৎ কমে যাওয়ারও সম্ভাবনা ছিল। তারপরও আমরা এ ঝুঁকি নিয়েছি। এটি সাধারণ মানুষের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন- টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচারক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হাসান প্রমুখ।
এদিকে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।
টিসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনের সামনে, সচিবালয়ের সামনে ও প্রেসক্লাবের সামনেসহ ঢাকার ১০৩টি স্থানে, চট্টগ্রামের ৫০টি স্থানে ও গাজীপুরের ১৫-২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। প্রতিটি ট্রাকে ১০ টন করে পেঁয়াজ থাকবে এবং প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৪০ টাকা দরে বিক্রি করা হবে। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারীসহ যে কেউ এ ট্রাক থেকে সর্বোচ্চ আড়াই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।
টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান বলেন, দেশে পেঁয়াজের যে চাহিদা রয়েছে সেই পরিমাণ উৎপাদন হয় না। কিছুটা ঘাটতি থাকে। যে কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করা হয়। এক্ষেত্রে ভারতের পেঁয়াজ আমদানি আমাদের জন্য সুবিধাজনক। কারণ ভারতের পেঁয়াজ আমাদের দেশি পেঁয়াজের কাছাকাছি এবং দামও কিছুটা কম। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং দামও সুবিধজনক স্থানে ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নিজস্ব উদ্যোগে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভারতের সঙ্গে নেগোশিয়েশন করে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। নেগোশিয়েশনে ভারতে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ রপ্তানির কথা দেয়। তারই প্রথম চালান হিসেবে গত পরশু এক হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসে। ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে সেটিই এখন টিসিবির ট্রাক সেলের মাধ্যমে উন্মুক্তভাবে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০২৪
এসসি/আরবি