ঢাকা: যানবাহনে পরিবেশবান্ধব ও মূল সাশ্রয়ী জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম দ্বিগুণ করা উচিত বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
শনিবার সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক বিনিয়োগ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সম্মেলনে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০ জন বিনিয়োগকারী অংশ নেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে সিএনজির যে দাম তা তেলের দামের এক-চতুর্থাংশ। তাই এর দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করতে হবে। ’
বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম ১৬ টাকা ৭৫ পয়সা।
এরই মধ্যে পেট্রোবাংলা প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাব জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাব যাচাই করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) পাঠিয়ে দিয়েছে। শিগগিরই এর উপর সিদ্ধান্ত দেবে বিইআরসি।
দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে বিস্তর ফারাকের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ৪০ ভাগই ২০ বছরের পুরনো। গ্যাস সঙ্কটের কারণে তরল জ্বালানি (তেল) ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হয়েছে, যা অনেক ব্যয়বহুল। আমাদের আরেকটি সমস্যা হলো সিস্টেম লস। ’
২০১২ সাল নাগাদ উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে সমতা আনা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অবশ্য এজন্য বিদ্যুৎ খাতে প্রচুর ভর্তুকি দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি তার কাজ ঠিকমতো করতে পারছে না। একে আরো উন্নত করতে হবে। ’
বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে কয়লা উত্তোলনের বিষয়েও জোর দেন তিনি।
মুহিত বলেন, ‘চলতি বছরের শেষে চূড়ান্ত কয়লানীতি পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। ’
অর্থমন্ত্রীর মতে, এ দেশে বিনিয়োগে কোনো সমস্যা নেই। বিনিয়োগের অবকাঠামোগত সুযোগ নিশ্চিত করাই সমস্যা।
বিশেষ অতিথির বক্তেব্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভুইয়া বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে যে ফারাক রয়েছে , তা দূর করতে হলে বিকল্প জ্বালানির দিকে যেতে হবে। আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ কয়লা রয়েছে। তাই কয়লা উত্তোলন করতে হবে। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। ’
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘এর আগে আমরা লন্ডন, সিঙ্গাপুর ও নিউইয়র্কে বিনিয়োগকারীদের সামনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রকল্প উপস্থাপন করেছি। আজকের এ সম্মেলনটি এসবের ফলোআপ। ’
তার মতে, দেশে বেসরকারি ও সরকারি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়া।
‘এখন সেই উন্নয়নের জন্য আমরা সবাই প্রস্তুত। এছাড়া আমরা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে ভাবছি’, বলেন জ্বালানি উপদেষ্টা।
তিনি বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের জন্য সব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুল হকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎসচিব আবুল কালাম আজাদ। বিদ্যুৎ খাতের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এস এম আলমগীর কবির।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান এস এ সামাদ, জ্বালানি সচিব মো. মেজবাহ উদ্দিন প্রমুখ।
দিনব্যাপী সম্মেলনের ২য় অংশে ‘বিনিয়োগের সুযোগ’ ও ‘সমস্যা সমাধানের উপায়’ শীর্ষক দু’টি পৃথক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
‘বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক অধিবেশনে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদ। সভাপতিত্ব করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক। এতে সঞ্চালক ছিলেন ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
ড. এস এ সামাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আমরা যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি। যারা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী তাদের বিনিয়োগ করা টাকার উপর কোনো কর দিতে হবে না। তাদের বিদেশি কর্মকর্তাদের এদেশে কাজ করার জন্য কোনো ওয়ার্ক পারমিট লাগবে না। যন্ত্রপাতি আমদানিতে কোন ধরনের কর দিতে হবে না। ’
অর্থসচিব ড. মোহাম্মদ তারেকের সভাপতিত্বে ‘সমস্যা সমাধানের উপায়’ শীর্ষক অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান। এতে সঞ্চালক ছিলেন বিদ্যুৎসচিব আবুল কালাম আজাদ। ।
এছাড়া ২য় অধিবেশনে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ও জাইকার প্রতিনিধি ছাড়াও বিনিয়োগকারীরা বক্তব্য রাখেন।
বিকালে সর্বশেষ অধিবেশনে বিদ্যুৎ বিভাগ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১০