ঢাকা: দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও কাঙ্খিত পরিমাণ বিনিয়োগ আসছে না। যেটুকু বিনিয়োগ তার মুনাফার একটি উল্লেখযোগ্য অংশই আবার চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে।
এসইসি’র হিসেবে এ মুহুর্তে পুঁজিবাজারে মোট বিনিয়োগের মাত্র আড়াই শতাংশ হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগ।
বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বৈদেশিক মুদ্রা ও বাংলাদেশি টাকায় হিসাব খোলার নীতিমালা আংশিক শিথিল করলেও খুব একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, যে কোনো দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ হলে বিনিয়োগকারীদের কাছে এক ধরনের ইতিবাচক বার্তা পৌঁছায়। তাদের মধ্যে এক ধরনের আস্থা তৈরি হয়। অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগ উঠিয়ে নেওয়ার প্রবণতা থাকলে সেই আস্থা কমতে শুরু করে। পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে।
তবে বিদেশি বিনিয়োগের মুনাফার পুনর্বিনিয়োগ নিশ্চিত না করা গেলে বিনিয়োগের পরিমাণ কম হওয়াই ভালো মনে করছেন দেশি বিনিয়োগকারীরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪-০৫ অর্থবছর থেকে ২০০৮-০৯ অর্থবছর পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে দেশের পুঁজিবাজারে ৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকার সম-পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে।
এর মধ্যে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ৪১ কোটি ৯৬ লাখ, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৬৮ কোটি ৫৬ লাখ, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ৯৮৯ কোটি ৫৩ লাখ, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৯২২ কোটি ৪২ লাখ এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১ হাজার ১৮৩ কোটি ৯২ লাখ টাকার বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে। এছাড়া সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই ২০০৯-এপ্রিল ২০১০) পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে ১ হাজার ৩৭২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, গত ৫-৬ বছরে পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ২২০০ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে বিভিন্ন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এরমধ্যে বিশ¡মন্দার আতঙ্কে গত ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তুলে-নেওয়া হয়েছে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালে প্রণীত ‘ফরেন প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট (প্রমোশন অ্যান্ড প্রোটেকশন) আইন অনুযায়ী বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে এর মুনাফা তুলে নিতে পারেন। তবে কোম্পানির প্রি-আইপিও-তে বিনিয়োগ করলে তাতে নির্ধারিত সময়ের জন্য লক-ইন থাকে। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তারা ওইসব শেয়ার বিক্রি করতে পারেন না।
দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো ও এর মুনাফা ধরে রাখা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ডিএসই’র সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি-কে জানান, পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে ভালো ভালো সরকারি প্রতিষ্ঠানের অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার বাজারে ছাড়তে হবে।
তিনি বলেন, ইন্টারনেট ট্রেডিং সিস্টেম পুরোপুরি চালু করতে হবে, যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিজ দেশে বসেও ট্রেডিং করতে পারেন।
বিদেশি বিনিয়োগের মুনাফা ধরে রাখার জন্য এক বছরের জন্য লক-ইন প্রথা চালু ও মুনাফার ৫০ ভাগ এখানে পুনর্বিনিয়োগ করার শর্তারোপ করা যেতে পারে বলে মত দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময় : ১০৩৫ ঘন্টা, জুলাই ৩, ২০১০