ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

চামড়া পাচার ঠেকাতে বিডিআরকে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ

আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১০
চামড়া পাচার ঠেকাতে বিডিআরকে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ

ঢাকা: চামড়া পাচার ঠেকাতে সীমান্তে বিডিআর ও দেশের অভ্যন্তরে পুলিশকে আরও সতর্ক থাকার জন্য ঈদের পর নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব আবদুস সোবহান শিকদার শনিবার বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।



স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ঈদের আগেও আমরা একটি বৈঠকে পাচারের আশঙ্কা করেছিলাম। সে সময় এ বিষয়ে নজর রাখতে পুলিশ ও বিডিআরসহ স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলাম। ’  

এবার ঈদের চামড়া কেনার দাম নিয়ে মৌসুমী ক্রেতা ও চামড়া ব্যবসায়ীদের মতের অমিল হয়েছে। এ কারণে ‘ভালো দাম’ পাওয়ার আশায় ট্রাক ভাড়া করে চামড়া ঢাকায় না পাঠিয়ে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চামড়াগুলো পার্শ্ববতী দেশে পাচারের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, দেশের চামড়ার চাহিদার ৪০ শতাংশ সংগ্রহ করা হয় ঈদুল আজহার সময়। আর পুরো বছর ধরে বাকিগুলো সংগ্রহ করা হয়। চলতি বছর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ পিস।

কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করতে এ বছর ট্যানারির মালিক, পোস্তার পাইকারি ব্যবসায়ী এবং মৌসমী ব্যবসায়ীরা এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ শনিবার বাংলানিউজকে বলেন, ‘চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া সত্ত্বেও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বেশি দামে কোরবানিদাতাদের থেকে চামড়া কিনেছেন। এখন এই দামে আমরাতো চামড়া কিনবো না। ’

তিনি বলেন, ‘অনেকেই লোকসান করে আমাদের কাছে চামড়া বিক্রি করছেন। ’

তবে কেউ কেউ হয়তো ঢাকায় চামড়া না পাঠিয়ে পাশের কোনো পাচারকারীর কাছে ‘ভালো দাম’ পেয়ে চামড়া বিক্রিও করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করেন শাহীন আহমেদ।    

তিনি জানান, বিটিএ ঈদের আগে ১৫ নভেম্বর ঢাকার জন্য প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরের জন্য ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এ ছাড়া ছাগলের চামড়া ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ২০ থেকে ২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

এ হিসাবে একটি গরুর চামড়ার মূল্য হয় সাড়ে পাঁচশ থেকে হাজার টাকা। কিন্তু অনেক মৌসুমী ক্রেতাই গড়ে পনেরশ’ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত একেকটি চামড়া কিনেছেন।

দামের হেরফেরের সুযোগে অনেক এলাকায় মৌসুমী ক্রেতারা ও স্থানীয় আড়তদাররা লবণ দিয়ে প্রাথমিকভাবে চামড়া সংরক্ষণ করে রাখছেন। সুযোগ বুঝে তারা প্রতিবেশি দেশে পাচার করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন বলে চামড়া ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠেছে।

চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এবং দেশের সম্পদ রক্ষা করা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিব আবদুর সোবহান শিকদার বলেন, ‘ঈদের পর আমরা বিষয়গুলো মনিটরিং করছি। ’

তিনি বলেন, ‘নতুন নির্দেশনা দিয়ে পুলিশ ও বিডিআরকে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’

চামড়া পাচারের আশঙ্কায় চামড়া ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সীমান্তের কিছু এলাকার নামও সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র সচিব।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার অ্যান্ড লেদারগুডস এক্সপোটার্স এসোসিশেয়ন (বিএফএলএলএফইএ) এবং বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন (বিটিএ)’র পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চামড়া পাচারের রুটের ব্যাপারেও একটি আশঙ্কার কথা জানানো হয়। ’

চামড়া ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করে, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, কলারোয়া, জীবননগর, মেহেরপুর, দর্শনা, সোনামসজিদ, গোদাই, জাফলং, তামাবিল ও করিমগঞ্জ সীমান্তগুলো চামড়া পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে শনিবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ঈদের দিন থেকে আজ পর্যন্ত চামড়া পাচারের সুনির্দিষ্ট কোনো ঘটনার কথা জানা যায়নি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১০ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।