ঢাকা: পোশাকখাত উন্নয়নে বিশেষ করে পোশাক কারখানা নিরাপত্তা ও শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে আরো করণীয় রয়েছে বাংলাদেশের। পোশাক শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ছাড়াও তাদের অধিকার নিশ্চিত করার আরো অনেক কিছু রয়েছে বলে দাবি করেছে ইউএসটিআর নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন বিভাগের একটি জোট।
সংগঠনটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিখাতে জিএসপি (জেনারেলাইজড সিস্টেম প্রিফারেন্সেস) সুবিধা পেতে হলে পোশাকখাতে কর্মপরিবেশ উন্নয়নের দিকে আরো বেশি নজর দিতে হবে বাংলাদেশকে। পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তার দিকে আরো বেশি আন্তরিক হতে হবে।
এ ছাড়া পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ দিতে হবে। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে যারা কাজ করছেন, তাদের হয়রানি করা যাবে না এবং তারা যেন সহিংতার শিকার না হন, সে বিষয়টির ওপর নজর দিতে বলেছে ইউএসটিআর।
এমনকী সংশোধিত শ্রম আইনে শ্রমিকদের অধিকার সামান্য সংরক্ষিত হয়েছে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।
ইউএসটিআর শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পোশাক খাতে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটার পর ২০১৩ সালের জুন মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত রাখেন।
এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিনিধি মাইকেল ফ্রোম্যান এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, ২০১২ ও ২০১৩ সালে পোশাক কারখানায় যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে, সেজন্য পোশাক কারখানা পরিদর্শনের যেটুকু এখনো বাকি আছে, তা তাড়াতাড়ি শেষ করা হোক।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকারের এখনো করার অনেক কিছুই করার রয়েছে। বিশেষত, সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী, প্রাইভেট সেক্টর এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মধ্যে সমন্বয় তৈরি করাটা জরুরি একটা বিষয়। এই বন্ধন কারখানার নিরাপত্তা ও পোশাক খাতের জন্য বিশেষভাবে জরুরি।
মাইকেল ফ্রোম্যান শ্রম পরিবেশ ও শ্রমিক অধিকার রক্ষায় যারা আন্দোলন বা কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের যাতে আর হয়রানি না করা হয়, তার দিকে নজর দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এ ছাড়াও তিনি শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
মার্কিন প্রশাসন সম্প্রতি ইউএসটিআর-এর প্রতিবেদন পর্যালোচনাসহ জিএসপি ফিরে পেতে বাংলাদেশের জিএসপি অ্যাকশন প্ল্যান পর্যালোচনা করে।
পর্যালোচনায় কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে ও ভবন নিরাপত্তায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করা হয়।
পর্যালোচনায় বলা হয়, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং বিক্রেতাদের উদ্যোগে গত বছর বাংলাদেশের প্রায় দুই হাজার পোশাক কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে।
পরিদর্শন শেষে যে সুপারিশ করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, পরিদর্শন করা ২০০০ কারখানাগুলোর মধ্যে অন্তত ৩১টি পোশাক কারখানার সংস্কার করা প্রয়োজন। এর মধ্যে ১৭টিতে আরো সংস্কার এবং শতাধিক কারখানা সংস্কারে মনোযোগী হতে হবে।
সুপারিশে সরকারের উদ্দেশে বলা হয়, আরো শতাধিক কারখানা পরিদর্শন করা জরুরি। আর এ জন্য দক্ষ পরিদর্শক দল গঠন করা দরকার এবং এই পরিদর্শন অব্যাহত রাখা প্রয়োজন হবে।
পর্যালোচনায় জিএসপি ফিরে পেতে বাংলাদেশ যে পরিকল্পনা করেছে, তা আরো সংস্কার করা দরকার বলে মনে করছে ইউএসটিআর। এ বিষয়ে তারা সুপারিশ করে শ্রমপরিবেশ উন্নয়নে অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। এ জন্য আইন প্রয়োগের স্বচ্ছতাও থাকতে হবে।
অপরদিকে, মার্কিন প্রশাসন পোশাকখাতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে বাধা দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। শুধু তাই-ই নয়, পোশাক কারখানায় যারা ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন, তারা যেমন হয়রানির শিকার করা হচ্ছেন, তেমনি তারা সহিংসতার শিকারও হচ্ছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
মার্কিন প্রশাসন আরো উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, শ্রম আইন সংস্কারে শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ কমই সংরক্ষিত হয়েছে। এই আইনে শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। সেই সঙ্গে রফতানি প্রক্রিয়াজতকরণ অঞ্চলের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৩ সালের জুলাইয়ের ‘সাসটেইনেবল কম্প্যাক্ট অন ওয়ার্কার রাইটস অ্যান্ড ফ্যাক্টরি সেফটি ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাসহ (আইএলও) অন্যান্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
২০১৩ সালের জুনে বাংলাদেশের পোশাকখাতে কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক অধিকার বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধার আওতায় শুল্কমুক্তভাবে সে দেশে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি স্থগিত করে।
ওবামা প্রশাসন কংগ্রেস সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানান। তবে জিএসপি সুবিধা পর্যালোচনা করারও আশ্বাস দেন তিনি। তারই ভিত্তিতে বাংলাদেশের পোশাকখাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ক্রেতারা বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নেয় তারা।
বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পেতে পারে কিনা এ পর্যালোচনায় অংশ নেয়-ইউএসটিআর-এর নির্ধারিত জিএসপি সাবকমিটি অব ইন্ট্রা-এজেন্সি ট্রেড পলিসি স্টাফ কমিটি। এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে- ইউএস রিপ্রেজেন্টেটিভস অব দ্য ডিপার্টমেন্টস অব স্টেট, লেবার, কমার্স, এগ্রিকালচার, দ্য ট্রেজারি। এ ছাড়াও ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এর অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৫