ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

টেলিটক পার্ট-২

অবৈধ ভিওআইপি কারবারে শীর্ষে টেলিটক!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
অবৈধ ভিওআইপি কারবারে শীর্ষে টেলিটক!

ঢাকা: মাত্র ষোল দিনে তিন দফা অভিযান, বিটিআরসি ও র‌্যাবের যৌথ টিম হানা দেয় অবৈধ ভিওআইপি স্থাপনায়। অবৈধ ভিওআইপির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জমাদির সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকের আড়াই হাজারেরও বেশি সিম জব্দ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

উদ্ধার করা হয় টেলিটকের মডেম। বিটিআরসি’র কাছে থাকা অক্টোবর মাসের পরিসংখ্যান এটি।
 
টেলিটকের এই অবৈধ কারবারি নতুন চলছে অবলিলায়। রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ থেকে শুরু কর্মকর্তাদের যোগসাজোশে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ। কয়েক মাস আগেও অবৈধ ভিওআইপি’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক লাখের বেশি টেলিটক সিম বন্ধ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
 
বিটিআরসি’র অবৈধ ভিওআইপি অভিযান সংক্রান্ত তথ্য থেকে জানা যায়, অক্টোবরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিটিআরসির পরিদর্শক এবং র‌্যাবের যৌথ টিম রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ভিওআইপির কাজে ব্যবহৃত টেলিটকের দুই হাজার ৫৪৪টি সিম উদ্ধার ও জব্দ করে।
 
এরমধ্যে ১৩ অক্টোবর যাত্রাবাড়ী ধলপুর লিচুবাগান এলাকায় জয়নাল আবেদিনের বাড়ি (বাড়ি-৩৪/১, ৫ম তলা) থেকে ‘অবৈধ ভিওআইপি’ স্থাপনায় অভিযান চালায় র‌্যাব-১০ ও বিটিআরসি। এসময় তারা ১ হাজার ৬৩০টি সিম উদ্ধার করে, এর মধ্যে টেলিটকের সিম জব্দ করা হয় ১ হাজার ৩৮০টি। অবৈধ ভিওআপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় সে সময় টেলিটকের এক ডিলারকেও আটক করা হয়।
 
এরপর ১৮ অক্টোবর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজিমপুরে বিটিআরসি ও র‌্যাব-৩ এর যৌথ টিম চায়না গলিতে (ফ্ল্যাট-১২২/১) অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৫৩৩ট সিম জব্দ করে, এরমধ্যে টেলিটকের ১ হাজার ৭টি সিম জব্দ করা হয়। এসময় মামুন নামের একজনকে আটক করে র‌্যাব।
 
আর ২৮ অক্টোবর শান্তিনগরের বিটিআরসি ও র‌্যাব-৩ এর যৌথ টিম শেলটেক রহমান ভিলার ১৫-বি, ১৩৮,১৩৮/১,১৩৯ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে ১৩৫৭টি সিম জব্দ করে, যার মধ্যে ১৫৭টি সিম ছিলো টেলিটকের। অবৈধ ভিওআইপি কারবারি সঙ্গে জড়িত থাকায় এসময় দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
 
বিদেশ থেকে আন্তর্জাতিক কল আনার অবৈধ পথ ভিওআইপি বা ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল। অবৈধ ভিওআইপি কল আদান প্রদানে লাভভান হয় অবৈধ কারবারিরা।
 
বিটিআরসি জানায়, বৈধ পথে বিদেশ থেকে একটি কল প্রথমে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটর ও আইজিডব্লিউ অপারেটর সুইচের (আইওএস) মাধ্যমে আইসিএক্স অপারেটরের কাছে যায়। আইসিএক্স অপারেটরের মাধ্যমে তা মোবাইল অপারেটর হয়ে গ্রাহকের কাছে যায়। এর মাধ্যমেই দেশের গ্রাহকরা বিদেশ থেকে আসা কলে কথা বলতে পারেন।
 
ভিওআইপি পদ্ধতিতে আসা বিদেশি কলকে স্থানীয় মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে লোকাল কল হিসেবে দেখানো হলে দেশে কোন কল এলে অর্থ ভাগাভাগির স্বাভাবিক নিয়মটি থাকে না। এই অবৈধ ভিওআইপি কলের ফলে সরকার রাজস্ব হারায়। এতে অবৈধ কারবারিরা লাভবান হয়।
 
বিটিআরসি জানায়, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের সিম। সিমের পাশাপাশি ব্যবহার হচ্ছে টেলিটক ইউএসবি মডেম।
 
গত জুন মাসে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক বিটিআরসিকে এক চিঠিতে জানায়, একটি আন্তর্জাতিক কল গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর জন্য অপারেটররা পায় ২৭ পয়সা। আর স্থানীয় কলের ক্ষেত্রে তা ১৮ পয়সা।
 
তিন অপারেটর টেলিটকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, ভিওআইপির মাধ্যমে বিদেশি কল এনে টেলিটক স্থানীয় কল হিসেবে দেখিয়ে ২৭ পয়সা হারে আয় করা থেকে তাদের বঞ্চিত করছে। এরপর অভিযানে ১ লাখ ২০ হাজার টেলিটক সিম বন্ধ করে বিটিআরসি।
 
গত আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে বিটিআরসি’র তথ্যানুযায়ী, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় ব্যবহৃত টেলিটকের এমন সিমের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ। ওই সময় দেখানো হয়, এতে প্রতিদিন তিন কোটি মিনিট অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে করা হয়।
 
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, অভিযান চালিয়ে ও সতর্ক করার পরেও তা মানছে না টেলিটক। অবৈধ কারবারি চালিয়ে যাচ্ছে তারা। বিটিসিএল থেকে আসা সেখানকার এমডি থেকে শুরু করে কর্মকর্তারা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধ কারবারিকে মদদ দিচ্ছেন।
 
অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে টেলিটকের সিম ব্যবহার করা হলেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় সংসদীয় কমিটিও ক্ষোভ জানিয়েছে। কোন সিম থেকে অবৈধ ভিওআইপিতে কল যাচ্ছে, সেটাও জানে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু টেলিটকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জেনেও গুরুত্ব দিচ্ছে না।
 
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনাও আমলে নিচ্ছে না টেলিটক। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ায় নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও অবৈধ কারিবারি বন্ধ করা যাচ্ছে না। সব প্রচেষ্টাই আটকে দিচ্ছেন টেলিটকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা, জানান টেলিযোগাযোগ বিভাগের এক কর্মকর্তা।
 
ওই কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, অনিবন্ধিত সিম ভিওআইপি কাজে ব্যবহার হয়। কোন কোন রিটেইলার অনিবন্ধিত সিম বিক্রি করছে সেটাও জানে টেলিটক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রিটেইলারদের কাছে কমিশন নিয়ে কর্মকর্তারা সিম বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছেন। কোন কোন সময় রিটেইলারদের কাছে টেলিটক কর্মকর্তাদের উপঢৌকনও নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
এমআইএইচ/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।