ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সাবধান! বিলফি!

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৫
সাবধান! বিলফি! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সেলফি সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু বিলফি! ভ্যাট ফাঁকি রোধে বিলফিও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

বিশেষ করে তরুণদের কাছে। আর ব্যবসায়ীদের কাছে হয়ে উঠছে আতঙ্ক!
 
সম্প্রতি আরিফ ফরহাদ নামে এক ভোক্তা খেতে গেলেন রাজধানীর কারওয়ানবাজারের সুসজ্জিত ভাত ভর্তা রেস্টুরেন্টে। বিক্রেতারা বিল দিলেন, কিন্তু তাতে নেই বিআইএন (বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) বা ভ্যাট নম্বর। তিনি বিলের ছবি তুলে অভিযোগ দেওয়ার একদিন পরই অভিযান। পালিয়ে বাঁচলেন মালিক-ম্যানেজার।
মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
 
সূত্র জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্যাট ফাঁকি রোধ ও জনগণকে ভ্যাট সম্পর্কে সচেতন করতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করছে। খোলা হয়েছে কয়েকটি ফেসবুক পেজ। তাতে যেকোনো ভোক্তা অভিযোগ দিলে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষ করে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা-উত্তর (https://www.facebook.com/dhakanorthvat/) ও ভ্যাট ইন্টেলিজেন্স (https://www.facebook.com/vatintelligencebd/) এর পেজ বেশি সক্রিয়। ফেসবুকে সক্রিয় ও সচেতন তরুণরা এতে বেশি সাড়া দিচ্ছেন। দৈনিক শতাধিক অভিযোগ পড়ছে। আর প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে অভিযান চলছে। হচ্ছে মামলা, আদায় হচ্ছে ভ্যাট।
 
সূত্র আরো জানায়, ঢাকার অভিজাত এলাকা খ্যাত গুলশান, বনানী, বারিধারা এলাকায় অভিযানের ফলে বহু প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ভ্যাট দিচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নিতে আবেদন করেছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ অন্যান্য এলাকায়ও ফেসবুক পেজ খোলার নির্দেশ দিয়েছে ভ্যাট প্রশাসন। এতে অভিযানও চলছে বলে জানা গেছে।

ভ্যাট আদায় ও ভোক্তার সঙ্গে এনবিআরের দূরত্ব কমাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বহু ব্যবসায়ী সাবধান হয়ে গেছেন। অনেক ব্যবসায়ী বিলফি আতঙ্কে রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
 
সূত্র জানায়, সম্প্রতি কয়েকজন ভোক্তার অভিযোগের ভিত্তিতে গুলশানের ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট, সি-শেল চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ও সি-শেল রেসিডেন্স- এ অভিযান চালান মূসক গোয়েন্দারা। ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগের সত্যতা মেলে অভিযানে। তারা জব্দ করে নিয়ে আসেন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাগজপত্র ও কম্পিউটার সিপি।
 
অভিযানে দেখা যায়, মাসে কয়েক লাখ টাকা ভ্যাট ‍এলেও এনবিআরকে সোয়া লাখ টাকা ভ্যাট দেন মালিকরা। তারা ইসিআর ব্যবহার করেন না, দেন না মূসক চালান। নীল রঙের ক্যাশ মেমো দিলেও তাতে নেই বিআইএন নম্বর। তাতে দেখানো নেই ভ্যাট।
 
সি-শেল রেসিডেন্সে ৩০টি কক্ষ। নিজস্ব পিওএস বাইরের সার্ভারের সঙ্গে ইন্টারনালি কানেক্টেড। ফলে সহজে বিক্রয় গোপন বা তথ্য মুছে ফেলা যায়। মাসে লাখ টাকা ভ্যাট আদায় হলেও দেয় সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয় ১২ হাজার টাকা।
 
সি-শেল রেস্টুরেন্টেরও নিজস্ব পিওএস বাইরের সার্ভারের সঙ্গে ইন্টারনালি কানেক্টেড। মাসে ২ লাখ টাকারও কম ভ্যাট দিচ্ছে সরকারকে। এ প্রতিষ্ঠানটিও ভ্যাট বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বার বার ভঙ্গ করেছে। গোয়েন্দা দল জব্দ করেন রেকর্ড, হিসেবের খাতা ও কম্পিউটার পিসি, হয় মামলা।
 
সর্বশেষ গত সোমবার (৩০ নভেম্বর) ভ্যাট চেকারে দেওয়া বিলফি’র অভিযোগে সফল অভিযান পরিচালিত হয় রাজধানীর রায়েরবাজারের শেরেবাংলা রোডের একটি সুপারশপে।
 
ভোক্তারা অভিযোগ করেন, এ সুপারশপে পস (পয়েন্ট অব সেলস) ব্যবহার করা হয়, তাতে নেই ভ্যাট নম্বর। ভ্যাট নেওয়া হলেও তা ‘ছাড়’ দেখিয়ে অভিনব প্রতারণা করা হচ্ছে।
 
অভিযানে নেতৃত্বদানকারী মূসক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৩ সাল থেকে সুপারশপটি এমন জালিয়াতি করে আসছে বলে ভোক্তারা অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযানে সত্যতা পাওয়া গেছে। পণ্যে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকে, ভ্যাট দেখিয়ে তা ছাড় দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া ফিক্সড ভ্যাট দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যা কোনো আইনে নেই।
 
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির মাসিক বিক্রি ৭-৮ লাখ টাকা। ফিক্সড ভ্যাটের নামে মাসে লাখ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। আমরা কাগজপত্র ও সিপি জব্দ করেছি। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
মূসক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ ভ্যাট দিতে চান, অংশগ্রহণ করতে চান দেশের উন্নয়নে। বিশেষ করে তরুণরা। আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সক্রিয় তরুণদের ব্যবহার করে সফলতা আসবে- এমন ভাবনা থেকে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে (ঢাকা-উত্তর) কর্মরত থাকা অবস্থায় একটি ফেসবুক পেজ ‍খুলি। এতে বিলফি’র মাধ্যমে অভূতপূর্ব সাড়া দেন তরুণরা।
 
তিনি বলেন, এরপর থেকে ব্যাপক অভিযান, মামলা, ভ্যাট আদায়। বর্তমানে অভিজাত এলাকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিলফি আতঙ্ক রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে, অনেকে নিচ্ছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় নতুন এনবিআর গড়ার ক্ষেত্রে বিলফিও একটি মাইলফলক হয়ে উঠছে।
 
তিনি আরো বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য কাউকে হয়রানি নয় সচেতন করা। বিলফি’র ব্যবহার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে মূসক গোয়েন্দার পেজেও অনেক সাড়া পাচ্ছি। তিনি সবাইকে এতে অংশগ্রহণ ও ব্যবসায়ীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৫
আরইউ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।