ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সাক্ষীর অভাবে খালাস পান ৬০শতাংশ জালনোট কারবারি

শাহেদ ইরশাদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
সাক্ষীর অভাবে খালাস পান ৬০শতাংশ জালনোট কারবারি

ঢাকা: জালনোট কারবারি মামলার ৬০ শতাংশ আসামি সাক্ষীর অভাবে খালাস পেয়ে যাচ্ছেন। একই কারণে বিচার কাজও সম্পন্ন করা যাচ্ছে না ৮০ শতাংশ মামলার।



জাল টাকা প্রতিরোধ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সের বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে জানানো হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জালনোট কারবারিদের বিরুদ্ধে মোট ৩৬৭টি মামলা হয়েছে।

এরমধ্যে চূড়ান্ত রায় হয়েছে মাত্র ৪৪টি মামলার। যার মধ্যে ২৮টি মামলার আসামিই খালাস পেয়েছেন। যা বিচার কাজ সম্পন্ন হওয়া মামলার ৬০ শতাংশ।

বাকি ১৬টি মামলায় আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র একজনের সর্বোচ্চ শাস্তি হয়েছে যাবজ্জীবন।  

অপর এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪ সালে জালনোট কারবারিদের বিরুদ্ধে ৩৬৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। ওই বছরে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১১৯টি মামলা।

এ পর্যন্ত হাতেনাতে ধরাপড়া জাল নোট কারবারিদের বিরুদ্ধে মোট মামলা হয়েছে ৬ হাজর ১২৮টি। যার ৮০ শতাংশই এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি।

জাল টাকা উৎপাদন ও বিস্তার রোধে অর্থ, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, আইন প্রয়োগকারী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে জাল টাকা প্রতিরোধ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স রয়েছে।

বুধবার (০৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে এ টাস্কফোর্সের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।  
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সাক্ষীর অভাবে জাল টাকার অধিকাংশ মামলার আসামিরা সহজেই জামিন পেয়ে যান। বিচার কাজ শেষে খালাস পান চূড়ান্ত রায়েও।

জাল টাকা উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থল থেকে ভাসমান ব্যক্তিকে (রিকশা চালক-বাড়ির প্রহরী) সাক্ষী করা হয়।

এসব সাক্ষীরা ভুল ঠিকানা ব্যবহার করেন। যে কারণে পরে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়না।

বৈঠকের অনেকেই অভিযোগ করেন, কারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে ঘুষের বিনিময়ে ভৌতিক সাক্ষী করে পুলিশ। পরে এসব সাক্ষীর অস্তিত্ব না পাওয়ায় সহজেই খালাস পেয়ে যান আসামিরা। জাল টাকার প্রভাবশালী কারবারিরা সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আদালতে হাজির হতে দেয় না বলেও অভিযোগ করা হয় বৈঠকে।
 
আবার অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে কারবা‍রিদের বিরুদ্ধে শিথিল করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ।

এ চার্জশিট অনুসারে পরবর্তীতে মামলার বিচার শুরু হয়। এতে সহজেই মামলা থেকে রেহাই পায় জাল টাকা প্রস্তুত ও সরবারহকারীরা। পরে হয়ে ওঠে আরও বেপরোয়া।

মামলা নিষ্পত্তির এই হার ও আসামিদের খালাস পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বৈঠকের কয়েকজন সদস্য।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষীর অভাব, আসামিদের প্রভাব ও অভিযোগপত্রের দুর্বলতার কারণে মামলা থেকে সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছেন আটক হওয়া দুষ্কৃতিকারীরা।

সূত্র জানায়, দণ্ডবিধি বা পেনাল কোড ১৮৬০ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ (স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট) আইনে জাল নোটের কারবারীদের বিচারের বিধান রয়েছে।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে জাল টাকা কারবারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকায় আসামিদের এ আইনের অধীনে বিচার করা হয়।

ধারা ২৫-এ বলা হয়েছে, যেকোনো কারেন্সি নোট ও সরকারি স্ট্যাম্প জাল করলে শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। তবে এ আইনের অনেক ফাঁক-ফোকর রয়েছে।

তবে ফাঁক-ফোকর ও দুর্বলতা জানার পর আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটি তিন মাসের মধ্যে আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে জাতীয় সংসদে পাঠাবে। জাতীয় সংসদে পাস হলে তা আইনে রূপ লাভ করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বাংলানিউজকে বলেন, জালনোট কারবারিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রচলিত আইনে অনেক দুর্বলতা রয়ে গেছে। যার কারণে আসামিরা সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া অনেক গ্রাহক পণ্য বিক্রির মাধ্যমে জাল টাকা পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তিনি বলেন, জাল টাকার কারবারিরা ধরা পড়লেও নানা কৌশলে সহজেই জামিন পেয়ে যান। পরবর্তীতে একাজে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন তারা। প্রশাসনিক ও আইনি দুর্বলতার কারণে এটি হচ্ছে। আমরা নতুন আইন করে ও জনগণকে সচেতন করে জাল টাকার কারবার বন্ধের চেষ্টা করছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
ইএস/জেডএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।