ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

কেন্দ্রীয় ও সরকারি ব্যাংকে জাল ডলার শনাক্ত করার ব্যবস্থা নেই

হাসান আজাদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১০
কেন্দ্রীয় ও সরকারি ব্যাংকে জাল ডলার শনাক্ত করার ব্যবস্থা নেই

ঢাকা: বিদেশি মুদ্রা বিশেষ করে ডলারের জাল নোট শনাক্ত করতে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে কোনো যন্ত্রপাতি নেই। সকল সরকারি ও দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকের অবস্থাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতই।



আর বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরেরও জানা নেই।

উল্লেখ্য, দেশে গুটি কয়েক বহুজাতিক ও বৈদেশিক ব্যাংকে এ সুবিধা রয়েছে।

এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে জাল ডলার শনাক্ত করার ব্যবস্থা না থাকার সুযোগ নিচ্ছে প্রতারক চক্র। ফলে দেশে জাল ডলারের লেনদেনের পরিমাণ ক্রমশঃই বাড়ছে। আর তাতে ধোঁকা খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

এমনও ঘটনাও রয়েছে, দেশ থেকে ডলার কিনে বিদেশে যাওয়ার পর তা ভাঙানোর সময় সেগুলো জাল বলে ধরা পড়ে। এতে যারপরনাই হয়রানির শিকার হচ্ছেন নিরপরাধ মানুষ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ড. আতিউর রহমান এ বিষয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘জাল ডলার শনাক্ত করার কোনো যন্ত্রপাতি আছে কিনা আমার জানা নেই। ’

তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেন তিনি।

সেই সূত্র ধরে কথা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক অসীম দাশগুপ্ত বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘ডলার কেনাবেচার কোনো কাজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেই। তাই জাল ডলার শনাক্ত করার যন্ত্রপাতিও প্রয়োজন পড়েনি। তবে এখন আমাদের যে যন্ত্রপাতি আছে, সেখানে সফটওয়্যার ইনস্টল করে নিয়ে জাল ডলার শনাক্ত করা যাবে। ’

তিনি বলেন, ডলার কেনাবেচার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোই কাজ করে, সে কারণে তাদেরই দায়িত্ব ডলার জাল কিনা পরীক্ষা করা।   একই সঙ্গে গ্রাহকদের উচিত ডলার কেনার সময় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নেওয়া।

তবে জাল নোট শনাক্ত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও একটি ভূমিকা থাকতে পারে তা সাম্প্রতিক একটি ঘটনা থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে।  

সম্প্রতি বিদেশে গিয়ে জাল ডলারের কারণে হেনস্তার শিকার হন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, সরকারি ভ্রমণে বিদেশ যাওয়ার আগে জনতা ব্যাংকের বৈদেশিক শাখা (বায়তুল মোকারমের উল্টো দিকে অবস্থিত) থেকে বেশ কিছু ডলার কেনেন। বিদেশে একটি ব্যাংকে ডলার ভাঙাতে গেলে তারা জানায়, ডলারগুলো জাল। দেশের একটি সরকারি ব্যাংক থেকে এই ডলার কেনা হয়েছে জানালে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আরও নিশ্চিত করতে ওই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠায়। সেখান থেকেও ডলারগুলো জাল বলে মতামত দেওয়া হয়।

সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পর দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ডলারগুলোর ও পাসপোর্টের  ফটোকপি রেখে সেগুলো ফেরত দেয়।

ওই সরকারি কর্মকর্তা আরও জানান, দেশে ফিরে জনতা ব্যাংকের বৈদেশিক শাখায় গিয়ে জাল ডলারগুলো তাদের দিলে, সেখানকার কর্মকর্তারা হাতে ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডলারগুলো জাল নয় বলে মতামত দেন। এবং ডলারগুলো তারা ফেরত নিতে পারবেন না বলে জানান।

এ বিষয়ে কথা বলতে বৃহস্পতিবার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি’র পক্ষ থেকে জনতা ব্যাংকের বৈদেশিক শাখায় গেলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যস্ত আছেন জানিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষায় রেখে পরে ফিরে যেতে বলা হয়।

এদিকে ওই সরকারি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেরই বক্তব্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জাল ডলার শনাক্ত করার ব্যবস্থা থাকলে বিষয়টি সেখানেই সুরাহা হতে পারতো।

ডলার লেনদেনের কোনো ফাংশন নেই বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবশ্যই এমন একটি ব্যবস্থা থাকতে পারে। তবে সরকারি ব্যাংকগুলোতে এ ধরনের যন্ত্রপাতি রাখা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্যোগ নিতে পারে। ”

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৩৫৫, জুলাই ৬, ২০১০।


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।