ঢাকাঃ ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে পোশাক শ্রমিকরা। এ নিয়ে এরইমধ্যে শ্রমিক সংগঠনগুলো একাধিক বৈঠকে মিলিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগের তুলনায় চলতি বছর আরো সুসংগঠিত আন্দোলনের জন্য শ্রমিকরা কাজ করছে। তারা চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল নাগাদ ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে মাঠের আন্দোলনে নামবে। এবার ন্যূনতম মজুরি ১৫ হাজার টাকা দাবি করা হবে। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সমঝোতা করা হবে না।
এ প্রসঙ্গে শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার বলেন, ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরিতে একজন শ্রমিকের জীবনধারন কষ্টকর। তাই শ্রমিকদের মাঠে নামার আগেই মালিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো উচিত।
তিনি বলেন, পোশাক শ্রমিকদের ঘামেই তৈরি হয়েছে এতো বড় শিল্প। কিন্তু তারাই মানবেতরভাবে জীবনযাপন করছে। ৫ হাজার ৩০০ টাকায় একজন মানুষ তার পরিবার নিয়ে রাজধানীতে কিভাবে বসবাস করে তা মালিকপক্ষকে চিন্তা করা উচিত। এ টাকায় একজন শ্রমিক বস্তিতে থাকতে পারে।
নাজমা বলেন, শ্রমিকরা কখনোই চায় না পরিস্থিতি অশান্ত হোক। আর তাই আমরা চাই শ্রমিকরা মাঠে নামার আগেই মালিকদের পক্ষ থেকে ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে দেয়া হোক। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে শ্রমিকরাতো মাঠে নামবেই। দুই বছর আগে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখনই সঠিক সময় ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর।
এদিকে মার্চ-এপ্রিল মাসে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি শ্রমিকরা শেষ করেছে বলে জানিয়েছেন রেডিমেট গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন সভাপতি লাভলী ইয়াসমীন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার বিবেচনা করে আমরা ন্যূনতম মজুরি ১৫ হাজার টাকা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছি। মালিকরা যদি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই ন্যূনতম মজুরি না বাড়ান তাহলে মার্চ-এপ্রিল নাগাদ শ্রমিকরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।
তবে ২০১৩ সালে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর পর ক্রেতারা মূল্য বৃদ্ধি না করায় বিপাকে পড়তে হয় গার্মেন্ট মালিকদের। তাই এখন শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর আন্দোলন করা সময়োপোযোগী হবে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর প্রশ্ন এলেই ক্রেতারা পণ্যের মূল্য বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। যা কেবল প্রতিশ্রুতিই থেকে যায়, বাস্তবে আলোর মুখ দেখে না। দুই বছর আগে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর সময় ক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তারা তাদের দেয়া আশ্বাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। মাত্র দুই বছর আগে এক দফা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানো হলো। এখনই আবার ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর আন্দোলন সময়োপোযোগী হবে না। এমনটা হলে ছোট ও মাঝারি আকৃতির কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শ্রমিকদের ওপর।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের শুরু থেকেই শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন। গঠিত হয় মজুরি বোর্ড। মালিক, শ্রমিকদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে মজুরি বোর্ডের ১০ম সভায় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা ঘোষণা করা হয়।
বিজিএমইএ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রায় ৫ হাজার গার্মেন্ট রয়েছে- যাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৫
ইউএম/জেডএম