ঢাকা: দেশে সবজি উৎপাদনের সফলতার ছোঁয়া লেগেছে রপ্তানিতে। ফলন বেশি ও ভালো হওয়ায় গত কয়েক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে রপ্তানির পরিমাণ।
কৃষকের হাতে উৎপাদিত সবজি এখন ইউরোপ, এশিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে হরদম। বিশ্ববাজারে আরও বেশি পরিচিতি পাচ্ছে বাংলাদেশের সবজি। একইসঙ্গে মজবুত হচ্ছে দেশের অর্থনীতির ভিত।
শুধু সবজি নয়, কৃষিপণ্যের রপ্তানির পরিমাণও বেড়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং সূত্র জানায়, ২০১১ সালে সবজি রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৬শ ১৩ মেট্রিকটন। ২০১২ সালে তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৮৮৯ মেট্রিকটনে।
এরপর প্রতিবছরই বাড়ছে সবজি রপ্তানির পরিমাণ। ২০১৩ সালে সবজি রপ্তানি হয় ৪৩ হাজার ২শ ৫০ মেট্রিকটন। ২০১৪ সালে সবজির রপ্তানি দ্বিগুণে দাঁড়ায়, পরিমাণ এক লাখ ২০ হাজার ৫শ ৬২ মেট্রিক টন। আর গতবছর (২০১৫ সাল) পরিমাণ ছিল একলাখ ৩১ হাজার ৩শ ৬৯ মেট্রিকটন। এ হিসাবে গত পাঁচবছরের ব্যবধানে সবজি রপ্তানি বেড়েছে দ্বিগুণ।
এদিকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট কৃষিপণ্যের রপ্তানির পরিমাণ ছিল আট লাখ ৫৯ হাজার ১৪০ মেট্রিকটন। তা গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৫ মেট্রিকটনে। মূলত আলু রপ্তানিই সবজির রপ্তানির পরিমাণের পরিসংখ্যানকে বদলে দিয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং উপপরিচালক (রপ্তানি) আনোয়ার হোসেন খান বাংলানিউজকে বলেন, সবজিসহ কৃষিপণ্যে রপ্তানিতে এখন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আমরা বেশকিছু রপ্তানিমুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। এরমধ্যে অন্যতম হলো চুক্তিতে চাষ। যা রপ্তানিকে অনেক গুণ উঁচুতে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি জানান, একসময় বেশ অসর্তকতা নিয়ে কাজ করতেন রপ্তানিকারকেরা। কিন্তু কঠোর নজরদারি ও সিদ্ধান্তের কারণে সেখান থেকে তারা সরে আসছেন। তবে সবজিসহ কৃষিপণ্যে রপ্তানিতে সবধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত তারা।
এদিকে সবজি রপ্তানি সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখনো বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা নিয়েই তাদের সবজি রপ্তানি করতে হচ্ছে। ফলে পরিমাণ খুব একটা বাড়ছে না। এসব প্রতিবন্ধকতার সমাধান হলে সবজিসহ কৃষিপণ্যের রপ্তানি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএলপিইএ) সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পরিবহন, পণ্য সরবরাহের পদ্ধতিসহ বেশকিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে আমরা সবজি রপ্তানি করছি।
তিনি বলেন, দেশে অনেক রপ্তানিকারক আছেন যারা সবজি রপ্তানি করতে চান। কিন্তু এসব সমস্যার কারণে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এগিয়ে আসা উচিত।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সবজির বাজারের মধ্য অন্যতম বড় বাজার হলো যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরব। এই দুই দেশে ১০ হাজার মেট্রিকটনের চেয়ে বেশি সবজি রপ্তানি হয়েছে গত অর্থবছরে। এছাড়া সবজির বড় বাজার হিসেবে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার ও মালয়েশিয়া।
আর যেসব সবজি বেশি রপ্তানি হচ্ছে তার মধ্য অন্যতম হলো শাক-সবজি, আলু, হিমায়িত সবজি, হিমায়িত স্ন্যাক্স, শুকনা সিম। গত অর্থবছরে শাক-সবজি রপ্তানি হয়েছে ৩৭ হাজার ৩৭৩ মেট্রিকটন, আলু ৯০ হাজার ৪৯০ মেট্রিকটন।
কৃষিবিদরা জানান, রপ্তানির বাজার যেন শুধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, এর সুবিধা যেন সবজিচাষিরাও পায়। তবেই সবজির মান ভালো হবে। বিশ্ব থেকে সুনাম অর্জন করবে।
** বিশ্বে সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয়
বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৬
একে/এএ