পবার (রাজশাহী) পারিলা থেকে ফিরে: দিনের পর দিন হাড় ভাঙা খাটুনি। ঘাম ঝরানো শ্রমে মাঠভরা ফসলেরই স্বপ্ন দেখেন কৃষক।
আর স্বপ্ন ভাঙলে কষ্টে বুক ফাটে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এবার খানিকটা ব্যতিক্রমই ঘটেছে রাজশাহীতে। বৈরী আবহাওয়ায় সোনালি ডিম খ্যাত আলুর বাম্পার ফলন হয়নি।
তবে বাজারে ভালো দাম থাকায় অল্প ফলনেই কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে সোনালি ডিম। তাই গতবারের লোকসান কাটিয়ে ওঠা যাবে এবার। হারানো পুঁজি আবারও একট্টা করা যাবে। এবছর এমন আশাই সঞ্চারিত হয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের সাধারণ কৃষকদের মনে।
রাজশাহীর বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠজুড়ে এখন কেবলই সোনাঝরা আলুর সমারোহ। প্রসিদ্ধ হওয়ায় এখানকার চাষিরা আলুকে আদর করে ‘সোনালি ডিম’ বলে ডাকেন।
এক সময় এ ‘সোনালি ডিম’ চাষ করেই লাভের মুখ দেখতেন রাজশাহীর কৃষকরা। অথচ দাম না থাকায় গত বছর বাম্পার ফলনেও পথে বসেন এখানকার আলুচাষিরা।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে কনকনে শীতে মাঠে কাজ করলেও শেষ পর্যন্ত তা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। একে হরতাল-অবরোধে পরিবহনের বেহাল অবস্থা। তার উপর বাজারে দাম পড়ে যাওয়ায় মাঠেই পচে নষ্ট হয় কৃষকের আলু। লাভের মুখ দেখা দূরে থাক, লোকসানে পুঁজি হারিয়েছেন অনেক কৃষক।
তবে রাজশাহীতে এবার মাঠের চিত্র ভিন্ন। চাষিরা এখন জমি থেকে আলু ওঠাতে দিনভর ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। প্রতিকূল আবহাওয়া ও নানান রোগে গত বছরের চেয়ে এবার আলুর উৎপাদন কমে গেছে। দাম ভালো থাকায় চাষিরা এখন পর্যন্ত স্বস্তিতে রয়েছেন।
রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা গ্রামের কৃষক সাইফুদ্দিন মোল্লা জানান, এখন আলু ওঠানোর ভরা মৌসুম চলছে। চাষিরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মাঠ থেকে আলু ওঠাতে।
আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবার আলুর ফলন অনেক কম হয়েছে। কৃষকরা বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ বস্তা (প্রতি বস্তা ৮৫ কেজি) আলু পাচ্ছেন।
অথচ গতবছর আলুর ফলন এবারের চেয়ে ভালো ছিলো। গত বছর প্রতি বিঘায় চাষিরা ৪০ থেকে ৪৫ বস্তা আলু পেয়েছেন। গত মৌসুমে আলুর দাম কম থাকলেও এবার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এবার প্রতিবস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। গত বছর এ সময় প্রতিবস্তা আলু বিক্রি হয়েছিলো ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকায়। তাই এবার উৎপাদন কম হলেও দাম ভালো থাকায় চাষিদের মুনাফা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পবার তেবাড়িয়া গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা বলেন, চলতি মৌসুমে আলু উৎপাদন করতে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বর্তমানে বিঘাপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ বস্তা আলু পাওয়া যাচ্ছে।
এতে প্রতিবিঘা আলু ৩৩ থেকে ৪২ হাজার টাকায় বেচা যাচ্ছে। তাই উৎপাদিত আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচ ওঠে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে থাকছে বাড়তি লাভও। ওঠতি মৌসুম শেষে আরেক দফা দাম বাড়লে এ লাভ থেকে গত বারের লোকসান পুষিয়ে নেওয়া যাবে বলে আশা করেন কৃষক গোলাম মোস্তফা।
আলু চাষের ওপর রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত চাষি পবার রহিমুদ্দিন সরকার বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবার আলুর উৎপাদন কম হয়েছে। মাঘের শেষে বৃষ্টি ও শীত কম পড়ায় ক্ষতি হয়েছে আবাদের।
পবার রহিমুদ্দিন সরকার তার ১৪ বিঘা জমিতে এবার আলু আবাদ করে প্রতি বিঘায় ৩৬ বস্তা করে আলু পেয়েছেন। তিনি নিজেও গতবারের চেয়ে বিঘাপ্রতি ১০ বস্তা করে ফলন কম পেয়েছেন বলে জানান।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি বাংলানিউজকে জানান, গতবছর রাজশাহীতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৩৪ হাজার ৩৫২ হেক্টর। আবাদ হয়েছিলো ৩৬ হাজার ২১৫ হেক্টর।
এবারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৩৬ হাজার ৯১৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৩৯ হাজার ৯৩৫ হেক্টরে। তবে এবার আবাদ বেশি হলেও প্রতিকূল আবহাওয়ায় আলু খেতে রোগ বালাইয়ের কারণে ফলন কমেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৬
এসএস/ওএইচ/