ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মিথ্যা ঘোষণায় আসে ৯০ শতাংশ চশমা!

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৬
মিথ্যা ঘোষণায় আসে ৯০ শতাংশ চশমা!

ঢাকা: শহরের আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে বাহারি চশমার দোকান। রাস্তায় অত্যন্ত কম দামে বিক্রি হচ্ছে চশমা।

এ চশমার ৯০ শতাংশ মিথ্যা ঘোষণায় ও অবৈধ পথে আসে।

রাজধানীর চকবাজার, জিঞ্জিরা, পাটুয়াটুলী এলাকার প্রায় ৪০ জন ব্যবসায়ী অবৈধভাবে এসব চশমা আনছেন। এতে প্রতিবছর প্রায় অর্ধকোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

এক শ্রেণির কাস্টমস কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে শতভাগ পরীক্ষা ছাড়াই এসব চশমা চলে আসছে। এতে বৈধ পথে চশমা আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

বুধবার (৩০ মার্চ) আগামী বছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ চশমা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মঞ্জুরুল হক শিকদার এ তথ্য জানান।

 

শিকদার বলেন, হাত বাড়ালে রাস্তার ধারে ৫০ থেকে ১শ’ টাকার মধ্যে চশমা পাওয়া যায়। এছাড়া চশমা ব্যবসায় লাভ বেশি বলে বহু দোকান গড়ে উঠেছে। সুলভ মূল্যে এখান থেকে লেন্স, ফ্রেম পাওয়া যায়। কিন্তু এসব চশমার ৯০ শতাংশ আসে মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে।
 
তিনি বলেন, বহু বছর থেকে চীন থেকে অবৈধ পথে এসব চশমা দেশে চলে আসছে। এতে প্রতিবছর সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আমদানি ছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে যেসব চশমা বিক্রি হয় তাতে কোনো ভ্যাট পায় না সরকার।
 
শিকদার অভিযোগ করে বলেন, ৩০ থেকে ৪০ জন চিহ্নিত ব্যবসায়ী বছরের পর বছর শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানি করলেও এনবিআর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বৈধ পথে আমদানিতে আমাদের শুল্ক হয়। ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
 
চীন ছাড়াও হংকং থেকে কিছু চশমা আমদানি হয়। চশমা আমদানিতে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে শুল্কায়ন করতে হয়। কিন্তু কাস্টমস কর্মকর্তারা অনেক বছর ধরে তা করছেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
 
সম্প্রতি প্রতারণার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে চীন ও হংকং থেকে যেসব চশমা আমদানি হচ্ছে তাতে ‘মেড ইন চায়না’ না লিখে ‘মেড ইন ইতালি’ লেখা হয়। এর মাধ্যমে ক্রেতাদের প্রতারিত করা হচ্ছে।
 
২০১৪-১৫ অর্থবছরের রাজস্ব আদায় তুলে ধরে শিকদার বলেন, এনবিআরের কিছু ভালো কাস্টমস কর্মকর্তা চলতি অর্থবছর শতভাগ পরীক্ষা করার কারণে প্রায় ২৪ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে।
 
চলতি অর্থবছর (জানুয়ারি পর্যন্ত) মাত্র ২ কোটি ৬০ লাখ টাকার রাজস্ব পেয়েছে সরকার। এখন পর্যন্ত গত অর্থবছর থেকে ২১ কোটি ৪০ লাখ টাকার কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এর জন্য মিথ্যা ঘোষণায় শুল্কায়ন ছাড়াই চশমা দেশে এসেছে বলে জানান তিনি।
 
চশমা আনলেও অবৈধ ব্যবসায়ীরা তা ঘোষণা দেয় না। চশমা আমদানিতে শুল্ক কমালে, সঠিকভাবে শুল্কায়ন হলে সরকার এ খাত থেকে প্রতিবছর প্রায় অর্ধকোটি টাকার বেশি রাজস্ব পাবে। সেজন্য অবৈধ পথে চশমা আসা বন্ধ, শতভাগ পরীক্ষার দাবি জানান তিনি।
 
এ বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ বলেন, ব্যবসায়ীরা আর মিথ্যা ঘোষণায় ও বন্ড মিস ইউজের মাধ্যমে আসা কাঁচামাল, পণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে চায় না।
 
এনবিআরের উচিত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিতে চশমার মতো ছোট পণ্য আমদানিতে শুল্ক কমানো। এতে রাজস্ব আয় বাড়বে, বৈধ ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত ও অবৈধ পথে চশমা আসা বন্ধ হবে বলে মনে করেন তিনি।
 
এনবিআর সদস্য (শুল্কনীতি) ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরাও চাই না অবৈধ পথে মিথ্যা ঘোষণায় চশমার মতো একটি পণ্য আসুক। শুল্ক বেশি না অন্য সমস্যা তা খতিয়ে দেখা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৬
আরইউ/জেডএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।