ঢাকা: ইলিশের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে পহেলা বৈশাখে এবার পান্তা-ইলিশ অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। এ নিয়ে চলছে জোর প্রচারণা, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমও এ বিষয়ে সচেতনতা চালাতে সচেষ্ট।
এমনই একটি অনলাইন শপ ‘অথবা ডটকম’। তারা ‘বৈশাখী ঝাঁপি: রসের হাড়ি’, ‘বৈশাখী ঝাঁপি: শখের ডালি’ হিসেবে নববর্ষ প্যাকেজ সাজিয়েছে। যে প্যাকেজের আওতায় প্রধান উপকরণ জাতীয় মাছ ইলিশ। তারা আবার সাইজও বলে দিয়েছে– পদ্মার ইলিশ ১.১ থেকে ১.২ কেজি (দামও আকাশচুম্বী)! এ নিয়ে অনলাইনে অথবা ডটকম বিভিন্ন সচিত্র পোস্ট দিয়ে যাচ্ছে, চালাচ্ছে প্রচারণাও। পাশাপাশি রয়েছে ইলিশের পৃথক চটকদার ছবি; সঙ্গে বৈশাখের প্রথম দিন পাতে ইলিশ তোলার পরোক্ষ আহ্বান!
একই অবস্থা ‘চাল ডাল ডটকমের’। প্রজনন মৌসুমে পদ্মার ইলিশ বলে তারা আস্ত ইলিশের ছবি দিয়ে অনলাইন বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এতে লাইক-কমেন্টও পড়ছে বেশ, বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
কেবল ‘অথবা ডটকম’ বা ‘চাল ডাল’ই নয়, তাদের মতো আরও অনেক অনলাইন বৈশাখের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের বিজ্ঞাপন-প্রচারণা চালাচ্ছে নির্বিবাদে। বিষয়টিকে সরকারি সিদ্ধান্তের সাংঘর্ষিক হিসেবে দেখছেন অনেকে, আবার কারও কারও মন্তব্য স্রেফ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারণার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শপগুলো এমনটি করছে।
মূলত সামাজিক মাধ্যমকে খবরের উৎস হিসেবে ব্যাপকভাবে মেনে নেওয়ার প্রবণতার পাশাপাশি ভরসার স্থল হিসেবেও দেখা হয়। বিশেষ করে যুবশ্রেণির মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি, সেটিকেই কাজে লাগাচ্ছে সুবিধালোভী অনলাইন শপগুলো। নববর্ষের প্রথম দিন ইলিশ খাওয়ার প্রচলন বাঙালি সংস্কৃতির ঠিক বড় একটি অংশ না হলেও প্রজনন মৌসুমে শপগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করছে ওই সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেই!
এ বিষয়ে শিক্ষক-গবেষক, রামরুর রিসার্চ ফেলো ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার বাংলানিউজকে বলেন, কারো মার্কেটিং পলিসিকে গ্রহণ নয়; পহেলা বৈশাখের মূল উপজীব্যকে আমাদের গ্রহণ করতে হবে। অসময়ে-প্রজননের আগে পহেলা বৈশাখে ইলিশ চেয়ে অতিরিক্ত চাহিদা না তুলে, মানুষে মানুষে একতা বৃদ্ধির উৎসব হিসেবে এটিকে কাজে লাগাতে হবে।
অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায়ও ইলিশ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রজনন মৌসুমে শখে ইলিশ খেয়ে; মৎস্য সম্পদ ধ্বংস না করে সরকারি নিয়ম মেনে চলা উচিত। দেরিতে হলেও বৈশাখে পান্তার সঙ্গে ইলিশ না খাওয়া বিষয়ক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। আশা করছি এটি কাজে আসবে, ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে।
টেলিভিশন, রেডিওসহ বাংলানিউজের মতো শীর্ষ অনলাইনে বৈশাখে ইলিশ কেনাবেচার বিপরীতে প্রচারণা চালানো হলেও অনলাইন শপগুলো এখন বেছে নিয়েছে ফেসবুক-টুইটার। এসব নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে- অনিবার্য সংঘাতের পথে সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যম! সংবাদমাধ্যমে যা প্রতিরোধে গণসচেতনতা চলছে, উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সেটিকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে চলছে ইলিশ বিক্রির প্রচারণা। এতে যেমন সৃষ্টি হচ্ছে অসময়ে ইলিশের চাহিদা, বাড়ছে দাম, ঠিক তেমনি দীর্ঘমেয়াদী মৎস্য সংকটে পড়তে পারে দেশ।
একটা সময় সুযোগ সন্ধানীদের দ্বারা রাজধানীর রমনায় পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ব্যবসা শুরু হয়। যেটি এখন সময়ের বিবর্তনে অনলাইন শপে ইলিশ বাণিজ্য পর্যন্ত ছড়িয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৬
আইএ/এইচএ/