ঢাকা: বরিশাল থেকে মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাসের ফোনটি বাংলানিউজে আসে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বেলা পৌনে একটার দিকে। বললেন, ইলিশ নিয়ে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে ভুল তথ্য রয়েছে সুধরে দিতে চান।
তথ্যগত এই ভুল শুধরে তিনি বললেন, আসলে এবারের ইলিশ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যে ক্যাম্পেইনটি হয়ে গেলো তাতে ফল পাওয়া যাবে। বাংলানিউজের রিপোর্টগুলোর প্রশংসাও করলেন তিনি। বললেন, প্রধান মিডিয়াগুলো এমন ভূমিকা নিলে তা থেকে দেশ উপকৃত হবে।
মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হলে দেশে এখন যে ইলিশ উৎপাদন হচ্ছে তা চারগুনে বেড়ে যাবে। তখন ইলিশেই দেশ চলবে, বলেন একজন আশাবাদী বিমল চন্দ্র দাস।
একটি হিসাবও দিলেন তিনি। বর্তমানে বছরে দেশে ইলিশ উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। যা চারগুন বেড়ে ১৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। প্রতি কেজি বড় ইলিশ গড়ে যদি ৫০০ টাকা করে বিক্রি হয় তাহলে এই ইলিশ থেকে আসবে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। যা দেশের মোট বাজেটের এক চতূর্থাংশ।
নাম আর পদবির সঙ্গে ‘ইলিশ’ শব্দটি যুক্ত এমন মৎস্য কর্মকর্তা দেশে একজনই এই বিমল চন্দ্র দাস। কথা বলে মনে হলো ইলিশ নিয়ে উন্নয়ন ভাবনা তিনি চেতনায় ধারন করেন। তাই কথা এগুলো।
বিমল জানালেন, ইলিশ উৎপাদনের আদ্যোপান্ত। বললেন, আসলে ইলিশ খাওয়া নয়, এই সময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে অভয়াশ্রমে ইলিশ ধরা। এই নিষেধাজ্ঞার সঠিক প্রয়োগের চেষ্টায় রত রয়েছে মৎস্য বিভাগ। প্রতিদিনই অসাধু জেলেদের আটকে দেওয়া হচ্ছে কারেন্ট জালে জাটকা ধরার অপতৎপরতা থেকে। আর এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পহেলা বৈশাখে গণভবনের খাবারের তালিকায় ইলিশ না রাখার ঘোষণা দেওয়ায় একটি বড় সাড়া পড়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই সাড়া থেকে জেলেদেরও কিছুটা টনক নড়েছে। এভাবে কয়েকটি বছর চললে দেশের নদীগুলো ইলিশময় হয়ে উঠবে, অত্যন্ত আশাবাদী কণ্ঠ ইলিশ কর্মকর্তার।
বিমল চন্দ্র জানালেন, মূলত সারাদেশে ৩৫০ কিলোমিটার নদীতে ৫টি অভয়াশ্রমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ রয়েছে। এসব এলাকায় এখন পোনা ইলিশ (জাটকা) ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরছে। আরেকটু বড় হলেই এই বৈশাখে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলেই ওরা সমুদ্রে চলে যাবে। ওদের নির্বিঘ্নে সমুদ্রে পার করে দেওয়াই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর সমুদ্রে বড় হওয়া ইলিশ ধরতে জেলেরা পরে ছুটবে গভীর সমুদ্রে আর ধরা পড়বে বড় বড় ইলিশ। সাম্পান, ট্রলার আর জাহাজ বোঝাই হয়ে আসবে ইলিশ। যা এখন বড় হচ্ছে দেশের অভয়াশ্রমগুলোতে।
পাঁচটি ইলিশ অভয়াশ্রমের কথা বিস্তারিত জানালেন বিমল চন্দ্র দাস। প্রথমটি ভোলার চর আলেকজান্ডার থেকে শুরু করে লক্ষ্মীপুর জেলা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। এটি মেঘনার নিম্নভাগ। এখানে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ রয়েছে মার্চ ও এপ্রিল এই দুই মাসের জন্য।
দ্বিতীয় অভয়াশ্রমটি ভোলার চর ইলিশা থেকে শুরু করে চর পিয়াল পর্যন্ত নিম্ন মেঘনার ৯০ কিলোমিটার। এখানেও মার্চ ও এপ্রিলের জন্য ইলিশের জাটকা ধরা নিষেধ করা রয়েছে।
তৃতীয় অভয়াশ্রমটি ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালির চররুস্তম পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার। এর বেশিরভাগই তেতুলিয়া নদীর অংশ। এখানেও মার্চ এপ্রিলে ইলিশ ধরা নিষেধ।
অপর দুটি অভয়াশ্রম অপেক্ষাকৃত ছোট। একটি পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে আন্দারমানিক নদীর ওপর ৪০ কিলোমিটার এলাকা। এখানে নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারি এই তিনমাস ইলিশ নিধন নিষিদ্ধ থাকে। এই মার্চ এপ্রিলে সেখানে মাছ ধরতে বাধা নেই বলে জানালেন বিমল চন্দ্র।
আর পঞ্চম অভায়শ্রমটি শরিয়তপুরের নড়িয়া ভেদরগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে চাঁদপুরের মতলব পর্যন্ত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা। এখানেও মার্চ-এপ্রিল এই দুই মাস ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ।