ঢাকা: দেশের ৯০ শতাংশ গার্মেন্টস কারখানায়ই ট্রেড ইউনিয়ন নেই বলে উঠে এসেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিআইবি’র ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, বিজিএমইএ’র মাধ্যমে মালিকপক্ষকে চাপ দিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন করার বিষয়ে নাকি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
দেশের ১০ শতাংশ কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন আছে, বাকিগুলোতে নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিজিএমইএ’র কোনো নেতার কারখানায়ই ট্রেড ইউনিয়ন নেই বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন শ্রমিকনেত্রী নাজমা আক্তারও।
তিনি অভিযোগ করেন, বিজিএমইএ’র কোনো নেতার কারখানায়ই ট্রেড ইউনিয়ন নেই। অন্য কোনো কারখানা মালিক ট্রেড ইউনিয়ন করতে শ্রমিকদের অনুমতি দিতে চাইলেও বিজিএমইএ’র নেতারা তাতে নিরুৎসাহিত করেন। শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন করতে চাইলে তাদের নানা ধরনের নির্যাতন করেন মালিকপক্ষ। মালিকদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কাছে অনেক সময় মুখ থুবড়ে পড়েন শ্রমিকরা।
ট্রেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক তপন সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিজিএমইএ’র এক সহ সভাপতির গ্রুপে কোনো শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন করতে চাইলে তাকে চাকরি থেকে জোরপূর্বক ইস্তফাপত্রে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এর আগে বিজিএমইএ’র এক বর্তমান সহ সভাপতির কারখানার পাঁচজন শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন করার উদ্যোগ নিয়ে আমার কাছে আসেন। তার কিছুদিন পরই তাদের চাকরি চলে যায়। কারখানার সব শ্রমিককে জানিয়ে দেওয়া হয়, আর যদি কেউ ট্রেড ইউনিয়নের বিষয়ে উদ্যোগ নেন, তাহলে তারও একই হাল হবে।
গার্মেন্টসে ট্রেড ইউনিয়ন না থাকার কথা স্বীকার করেছেন বিজিএমইএ’র সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান।
তিনি বলেন, অনেক গার্মেণ্টস কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নেই, এটা সত্যি। কিন্তু এটা মালিকপক্ষের চাপে নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন করছেন না। কারণ, আমরা শ্রমিকদের সব ধরনের সুবিধা দিচ্ছি। ঠিকমতো বেতন দিচ্ছি। ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নয়, শ্রমিকদের। তারা ইচ্ছা করলে ট্রেড ইউনিয়ন করবেন। আমার কোনো সমস্যা নেই’।
দেশের বেশিরভাগ কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন না থাকার কথা জানান এসএসইএ’র (সোসাইটি ফর স্যোসাল সিকিউরিটি এনহেন্সমেন্ট) সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষক তৌহিদুল হক।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দেশের ৯০ শতাংশের বেশি কারখানায়ই ট্রেড ইউনিয়ন নেই। ফলে শ্রমিকরা তাদের নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত হলেও প্রতিবাদ করতে পারেন না। উন্নত বিশ্বে শিল্পের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে গুণগত মানের দিকেও নজর দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে শিল্পের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও শ্রমিকদের ক্ষেত্রে গুণগত মান বাড়েনি। এর মূল কারণ মালিকদের মুনাফাভোগী মনোভাব। এখনো দেশের ৮০ শতাংশের বেশি কারখানার শ্রমিকরাই লিখিত কোনো নিয়োগপত্র পান না।
দেশের পোশাক শিল্পে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় ৪০ লাখ লোক কাজ করেন। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের (কেবলমাত্র ওভেন শার্ট) প্রথম চালানটি রফতানি হয় ১৯৭৮ সালে। এর পরেই বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ে।
১৯৮১-৮২ সালে মোট রফতানি আয়ে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান ছিল মাত্র ১.১ শতাংশ। সেখানে ২০১০ সালের মার্চ মাসে এ খাতের অবদান দাঁড়ায় মোট রপ্তানি আয়ের ৭৬ ভাগ।
সময়ের পরিক্রমায় তৈরি পোশাক আরও সম্প্রসারিত হয়ে ওভেন এবং নিটিং উপ-খাতে বিভক্ত হয়। ২০০২ সালে পোশাক রফতানিতে ওভেন ও নিটিং- এর অবদান ছিল যথাক্রমে ৫২.০৬ শতাংশ ও ৮.৫৮ শতাংশ। পরবর্তীকালে নিট পোশাক উপ-খাত ওভেন উপ-খাতের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে নিট উপ-খাত ওভেন উপ-খাতকে অতিক্রম করে সমগ্র রফতানিতে ৪১.৩৮ শতাংশ (৬৪২৯ মিলিয়ন ডলার) অবদান রাখে। বিপরীতে ওভেন পোশাক ৩৮.০২ শতাংশ (৫৯১৮.৫১ মিলিয়ন ডলার) নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে নেমে আসে।
প্রায় ৩০ লাখ নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এই শিল্প।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৬
ইউএম/এএসআর