ঢাকা: দেশে পর্যাপ্ত চাল মজুদ থাকায় এবার তা রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আপদকালীন মজুদ রেখে উদ্বৃত্ত চাল রফতানি করা হবে।
এরই মধ্যে কয়েকটি কোম্পানিকে চাল রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আরো কিছু কোম্পানি রফতানির আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদেরও অনুমোদন দেওয়া হবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সরকারের কাছে আগের ৩০ থেকে ৪০ লাখ মেট্রিক টন চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে। এ চালগুলোই রফতানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি বছর তিন কোটি ৮৭ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। এখান থেকেও প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত থাকবে। সব মিলিয়ে দেশে এখন চাল উদ্বৃত্ত আছে প্রায় এক কোটি টনের কাছাকাছি। ফলে নতুন চাল সংগ্রহ শুরু হওয়ায় গুদাম খালি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
মন্ত্রী বলেন, আমি ব্যবসায়ীদের সরু ও সুগন্ধি চাল রফতানির জন্য বলেছি। তবে আগে কেবল সরু চাল রফতানি হলেও এবার মোটা এবং সিদ্ধ চাল রফতানি করতে পারা আনন্দের। যদিও আগে শ্রীলঙ্কায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন মোটা চাল রফতানি হয়েছিল।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রথম পর্যায়ে ভারতের ত্রিপুরায় ৮ হাজার মেট্রিক টন চাল রফতানি করা হচ্ছে। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে এ চাল পাঠানো হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, দেশে প্রতিদিন চালের চাহিদা গড়ে ৯০ হাজার মেট্রিক টন। সে হিসেবে বছরে চালের চাহিদা ৩ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদিত হয়েছে ৩ কোটি ৪৭ লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন। এ সময়ে দেশি চাল উদ্বৃত্ত ছিল ১৮ লাখ মেট্রিক টন। একই সময়ে দেশে চাল আমদানিও হয়েছিল ১০ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন।
চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন। তবে বোরোর যে ফলন হয়েছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩ কোটি ৮৭ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে দেশে চাল আমদানিও করা হয়েছে এপ্রিল পর্যন্ত ৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন।
রাজধানীর বাদামতলি ও বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু দেশে চালের যথেষ্ট মজুদ আছে এবং কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম কম, তাই সরকারের চাল রফতানির সিদ্ধান্তে বাজার চাঙ্গা হবে।
তিনি বলেন, তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের একটি পদক্ষেপ ভুল বলে মনে হয়। সেটা হলো পোলাওয়ের চাল রফতানির সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, এমনিতেই দেশে সরু চালের বাজার আর ভারত ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা সরু চালের বাজার প্রায় সমান। ফলে, সরু চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে দেশি চালের বাজার অস্থির হবে এবং ভারতীয় ও পাকিস্তানি চালের বাজারে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।
হাজী নাজিম বলেন, তবে সিদ্ধ চাল রফতানির সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। এতে কৃষক, ব্যবসায়ী ও সর্বোপরি রাষ্ট্র লাভবান হবে।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চালের মজুদ নিয়ে এক মধুর সমস্যায় আছে সরকার। দেশের সরকারি খাদ্য গুদামগুলো এখন গম ও চালে ভরা। এরই মধ্যে চলছে নতুন গম ও চাল সংগ্রহ মৌসুম। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুরনো চাল সরিয়ে গুদাম খালি না করলে নতুন চাল রাখার স্থান সংকুলান সম্ভব হবে না। ফলে পুরনো চাল রফতানি ছাড়া সরকারের হাতে বিকল্প নেই।
এরই মধ্যে গুদাম খালির কৌশল নির্ধারণে বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৬
আরএম/এএসআর