ঢাকা: ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ ও পল্লী এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ২৫ লাখ নতুন গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে ওই ২৫ লাখ গ্রাহকের ঘরে স্থাপন করা হবে নতুন বৈদ্যুতিক মিটার।
‘পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ২৫ লাখ গ্রাহক সংযোগ’ প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২২৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৪৫৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৭৭১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) আওতাধীন ৭৭টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
মঙ্গলবার (৩১ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও একনেকের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। শেরে বাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এটিসহ একনেক সভায় মোট ছয়টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ২ হাজার ৭শ’ ৪৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে চায়। সরকারের এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৪১ কিলোমিটার লাইনের মাধ্যমে ১ কোটি ৪২ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সেবা দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাপবিপো একটি ইন হাউজ সিকউরিটি স্টাডি সম্পন্ন করেছে।
স্টাডির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, কোনো বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ না করে শুধুমাত্র ট্রান্সফার স্থাপন করেই ২৫ লাখ গ্রাহককে বিদ্যুতি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
প্রস্তাবনায় দেখা গেছে, ট্রান্সপোর্টেশন অ্যান্ড ল্যান্ডিং চার্জ খাতে ৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, ২৫ লাখ মিটার বাবদ সাড়ে ২৪ লাখ টাকা, সরবরাহ ও সেবা খাতে ৬৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যানবাহন কেনা বাবদ ৮০ লাখ টাকা ওসিডি ভ্যাট বাবদ ৩৭৬ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।
২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে হবে উন্নত দেশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা। ২০২১ সালে প্রয়োজন হবে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং ২০৪১ সালে প্রয়োজন হবে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বাংলাদেশে ২০০৭ সালে ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। কিন্তু গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে বহুগুণে।
বিদ্যুৎ, শিল্প, পরিবহন, বাণিজ্যিক, সার উৎপাদন, আবাসিক রান্নার কাজে গ্যাস প্রয়োজন। তাই পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী কয়লাকে প্রধান জ্বালানি রেখে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা হবে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৮ হাজার ৩৫৮ মেগাওয়াট। এটা কয়েকগুণ বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে সকলকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে।
একনেক সভায় ‘তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পটি'ও সংশোধিত আকারে অনুমোদন পায়। ফের সময় বাড়ানোর পাশাপাশি বেড়েছে এ প্রকল্পের ব্যয়ও। ১৮৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়বৃদ্ধি ও আরও আট বছর সময় বাড়ানো হয়েছে এ প্রকল্পে। মূল অনুমোদিত প্রকল্পের মোট ব্যয় ২২৭ কোটি টাকা হলেও ক্রমে ক্রমে তা আরও বাড়ানো হয়েছে।
২০০৬ সালে শুরু হয়ে প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশের কাজ ২০১০ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। ফের ব্যয় বাড়ানোর পর এ প্রকল্পের মোট ব্যয় হয়েছে ৪১৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আর সময় বেড়েছে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত।
এর আগে ২০১১ সালের জুনে প্রথম সংশোধিত ও ২০১৫ সালের জুনে ফের প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। প্রকল্পটি রংপুরের বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর ও ফুলবাড়ী উপজেলায়ও এর আওতায় সেচ সুবিধা দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পে’র পানি প্রাপ্তির বিষয়টি ভারত-বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির ওপর নির্ভরশীল। তাই দীর্ঘ চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে প্রকল্পের প্রস্তাবনায়।
দেশের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, নীলফামারী ও জয়পুরহাট জেলার ২২টি উপজেলায় সেচের অভাবে ফসলের অপর্যাপ্ততা রোধ করতে আশির দশকে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ে আলোচনা শুরু হলেও আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি।
প্রকল্প সংশোধন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, নানা কারণে তৃতীয়বারের মতো এ প্রকল্পের সংশোধন করা হয়েছে। অতিরিক্ত ২৬৬ দশমিক ৬৩ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ২৭ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার সেচ খাল খনন, ৩১ দশমিক ৩ কিলোমিটার এলঅকায় প্রাথমিক সেচ খাল খনন করা হবে।
পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় ৩৬টি হাইড্রলিক স্ট্রাকচার, ১১০টি মাইনর হাইড্রলিক স্ট্রাকচার, একটি রেলক্রসিং, ১৯টি ছোট সেতু ও প্রকল্প এলাকায় ৪৯ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন করা হবে বলেও জানান তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর