টঙ্গী, গাজীপুর থেকে: ভোর থেকেই শুরু হয়েছে সন্ধ্যা রাণীর (৩৫) জীবনযুদ্ধ। খাঁচায় ভরা সবজি নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় বাজারে।
সঙ্গী আরেক নারীকে নিয়ে তিনি রিকশায় তুলছেন রকমারি সবজি। সরকারের নতুন অর্থ বছরের বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সন্ধ্যা রাণী যেন ভড়কে ওঠেন। কপালে চিন্তার ভাজ। অবস্থা এমন যেন বাজেট শব্দটির সঙ্গে তিনি অপরিচিত। ছানাবড়া চোখ নিয়ে বললেন, ‘বাজেট কী, এইডাই তো বুঝলাম না। ’
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা চায়ের দোকানি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার মোশাররফ হোসেন (৩০) বললেন, সরকার কাল বাজেট উত্থাপন করছে। অহন জিনিসপত্রের দাম বাড়বো না কমবো, এইড্যা জানবার চাইতাছে। ’ কিন্তু সন্ধ্যা রাণী আর মুখই খুললেন না।
যে রিকশায় করে সন্ধ্যা রাণী সবজি নিয়ে বাজারে যাচ্ছেন সেই রিকশা চালকের বাড়িও ময়মনসিংহের গফরগাঁও। তার নাম রতন। বয়স ত্রিশ কী বত্রিশের হবে।
বাজেট নিয়ে এ রিকশা চালক বলেন, বাজেটের খবর রাখি না। পেটের খবর রাখি। অহন বাড়ি ভাড়া বাড়বো। গোমরা মুখে চটজলদি বলেই হনহন করে রিকশা নিয়ে বাজারের দিকে ছুটলেন তিনি।
শুক্রবার (০৩ জুন) ভোর সাড়ে ৫টায় গাজীপুরের টঙ্গী উপজেলার স্টেশন রোড এলাকায় আলাপ হচ্ছিলো তাদের সঙ্গে। তৃণমূলের জনগোষ্ঠীর বাজেট ভাবনা নিয়ে কথা বলতে গেলে এসব দৃশ্যের অবতারণা হয়।
সেখান থেকে কিছুটা সামনে এলেই চোখে পড়ে চায়ের দোকানের জমজমাট আড্ডা। সকালের ঝিরি ঝিরি হাওয়ায় সজীব-সতেজ মনে হলো নির্ঘুম চায়ের দোকানি জালাল উদ্দিনকে (৫৫)। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ভাবখালী ইউনিয়নে তার বাড়ি। প্রায় এক যুগ ধরে টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় দোকানদারি করেন তিনি। তার জীবনে বাজেটের নূন্যতম গুরুত্ব নেই।
অন্তত তার কথাবার্তায় এমনটিই মনে হলো। বাজেট প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গরিবের আবার বাজেট কী? আমগোর জীবনে এইড্যার কোনো গুরুত্বই নেই। এটড্যা বড় লোকগোর ব্যাপার-সেপার। হেগোলগে কথা কইলে বুঝবাইন। ’
জালালের সঙ্গে জমিয়ে আলাপের সময়েই নিজ হাতে পান বানিয়ে চিবুতে শুরু করলেন কাভার্ড ভ্যান চালক আবুল কাশেম (৫০)। তার বাড়ি খুলনায়। বলেন, ‘আমরা বাজেট বুঝি না?’ অনেকটাই অসন্তুষ্ট হয়ে দ্রুত গাড়ি স্টার্ট করে চলে গেলেন কাশেম।
বাজেট নিয়ে একই রকম অজ্ঞতার কথা জানালেন ওই এলাকায় আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে আসা আব্দুল মোতালেব। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ষাটোর্ধ্ব এ বৃদ্ধ বলেন, ‘আমরা ক্ষেতে পইড়া থাকি। বাজেট বুইজ্জা কী অইবো?’
এতোসব অজ্ঞতার বাইরে বাজেট সম্পর্কে নিজের খোলামেলা মন্তব্য উপস্থাপন করলেন রিয়াদ হোসেন। একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন তিনি। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশাল বড় আকারের বাজেট। এতে দেশের মানুষের উপকার হবে। স্বাস্থ্য সেবায় বড় ভর্তুকি রাখা হয়েছে। ’
ব্যাংকিং খাতের জন্য এ বাজেট যুগান্তকারী জানিয়ে এ ব্যাংকার বলেন, প্রতি বছর সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণ করে সরকার। এবার ঘাটতি কম রাখা হয়েছে। এতে করে সরকারি ব্যাংকগুলো নিজের পাঁয়ে দাঁড়াবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৬
এমএএএম/ওএইচ/এসএইচ