ঢাকা: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক দাবি করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, অতিরিক্ত মুনাফা করলে চট্টগ্রামের মীর গ্রুপের মতো অবস্থা হবে।
বৃহস্পতিবার (০৯ জুন) সচিবালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
রমজান মাসকে সংযমের মাস উল্লেখ করে তিনি ভোক্তার ক্ষতি না করে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার আহ্বান জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এটা হল সংযমের মাস। সবাই যেন আমরা সংযমী হই। ব্যবসায়ীরাও যাতে সংযমের মধ্য দিয়েই ব্যবসা করেন। অতিরিক্ত মুনাফার চেষ্টার করলে মীর গ্রুপের মত অবস্থা হবে।
কারসাজি করে অতিরিক্ত মূল্যে চিনি বিক্রির অভিযোগে চট্টগ্রামের মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম ও সেলস ম্যানেজার জানে আলমকে বুধবার (০৮ জুন) ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় মীর গ্রুপের খাতুনগঞ্জ কার্যালয় সিলগালা ও তিন কর্মচারীকে আটক করা হলেও পরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর না করাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা বাজেট দিয়েছি, ভ্যাট নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। আমরা সেটা কার্যকর করি নাই। একটি সহনীয় বাজেট দেওয়া হয়েছে। বাজেট দেওয়ার পর বাজারে অন্য রকম প্রতিক্রিয়া হয়, এবার সেটি হয় নাই।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হন, এটা যেমন চাই না, তেমনি ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হোক, সেটাও চাই না। বিষয়টি যাতে স্বাভাবিক থাকে, সেই দিকেই খেয়াল রাখতে হবে।
৪৮ টাকায় চিনি বাজারে ছাড়া হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে চায়।
তিনি বলেন, এখন কেউ এটার দাম যদি বাড়াতে চেষ্টা করে, এক্ষেত্রে যারা কারসাজি করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
চিনি ও ছোলা ব্যতীত অন্য সকল জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিকই আছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এগুলো স্বাভাবিকই থাকবে। সামনের কয়েক দিনের মধ্যে আরও স্থির হবে।
চিনির দর নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে মন্ত্রী বলেন, গতকাল খাতুনগঞ্জে এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং দুইজনকে হাতকড়া পরিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
দেশীয় চিনি শিল্পকে রক্ষা করতে ট্যারিফ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ১৮ টাকা আমরাই বৃদ্ধি করেছিলাম। এরপরও চিনির মূল্য ৬০ টাকার নীচে থাকার কথা। হয়তো আকস্মিকভাবে কেউ কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা ধরা পড়েছে।
তিনি বলেন, চিনি যারা পরিশোধন করে তারা ৪৮ টাকা দরে বিক্রি করে। পাইকাররা যদি ২ থেকে ৩ টাকা ব্যবসা করে, খুচরা বিক্রেতারা যদি ৫ টাকা লাভ করে তাহলেও এটা ৫৭-৫৮ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।
সরকার খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম বেঁধে দেবে কিনা এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে এটা করা যায় না। এছাড়া এটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজও না।
এর পরিবর্তে মন্ত্রী ভোক্তা অধিদপ্তরকে বাজার মনিটরিং জোরদার করার আহ্বান জানান।
ছোলার মূল্য বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এক বছর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার দাম ছিল কেজি প্রতি ৫২ টাকা। সেটি এখন ৭৩ টাকা। ৬০ ভাগ দাম বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতের বাজারে ছোলার ঘাটতি ১০ লাখ টন। অস্ট্রেলিয়ায় ১০ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকলেও ভারত সেটার পুরোটা নিয়ে নিচ্ছে।
বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, ছোলার দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই। ছোলা কোথায় যাচ্ছে তার তদন্ত হবে।
যারা নিজেরা পণ্য কেনেন না, বাজারেও যায় না, খবরও রাখে না, এমন অনেকে ‘টক শো’তে গিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে দাবি করে মন্ত্রী পণ্যমূল্যের বিষয়ে গণমাধ্যমকেও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান।
বৈঠকে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন এবং বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৬
এমআইএইচ/আরএইচএস