ঢাকা: রমজানের পুরো মাস জুড়ে রোজা শেষে সন্ধ্যায় ইফতার করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। আর এ উপলক্ষে রাজধানীর অলিগলি থেকে শুরু করে অভিজাত রেস্তোরাঁ কিংবা এলাকায় ইফতারের ধুম।
রাজধানীর ঐহিত্যবাহী ইফতারি বলতে পুরান ঢাকার ইফতারিকেই বোঝায়। তবে এদিক থেকে পিছিয়ে নেই রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলো।
রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বারিধারাসহ বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় আয়োজন করা হয় নানা ধরনের দেশীয় আইটেমের পাশাপাশি পাশ্চত্য আইটেমের মুখরোচক খাবার।
শুক্রবার (১০ জুন) এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হোটেল-রেম্তোরাঁগুলো রোজাদারদের চাহিদা মেটাতে নানা অভিজাত এলাকায় বাহারি পদের ইফতারির বাজারে বসেছে। এতে এসব এলাকার মানুষ হাতের কাছে পাচ্ছেন মুখরোচক নানা পদের ইফতার সামগ্রী।
তবে অন্যান্য এলাকা থেকে এখানকার খাবারের দোকানগুলোতে ইফতারির নানা পদের দামটা কিছুটা বেশি।
বনানীর ১১ নম্বর রোড দিয়ে এগিয়ে ডি-ব্লকে ঢুকলেই নাকে আসবে মুখরোচক নানা পদের ইফতারির ঘ্রাণ। ওই এলাকায় বেশ জনপ্রিয় একটি রেস্তোরাঁ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই রেস্তোরাঁয় মোট ৪৩ পদের ইফতারির আয়োজন করা হয় প্রতিদিন। এরমধ্যে পেঁয়াজু, ছোলা, আলুর চপ ও বেগুনি রয়েছে।
আর খাসির মাংসে মোল্লা হালিম, গরুর মাংসে মোল্লা হালিম , মেজবানি গরুর মাংস, টেংরি কাবাব, জালি কাবাব, লেগ কাবাব, বিফ সাসলিক, চিকেন সাসলিক, দই বড়া, আলু- পরোটা, ইরানি জিলাপি, মোটা বাবুর জিলাপিও রয়েছে এখানে।
রসনা বিলাসের ব্যবস্থাপক হেলাল উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, এ এলাকায় আমাদের ইফতারি-ই বেশি বিক্রি হয়। রসনা বিলাস দক্ষ রাঁধুনী দিয়ে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানসম্মত খাবার তৈরি করে।
‘এখানে আপনি পুরান ঢাকার ইফতারির ফ্লেবার পাবেন। ফলে আপনাকে কষ্ট করে পুরান ঢাকায় যেতে হবে না। ইফতারি আইটেমগুলোর মধ্যে হালিম ও কাবাব-ই বেশি বিক্রি হয়। ’
পার্সেলের পাশাপাশি রেস্তোরাঁয় বসেও ইফতারির ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানান তিনি।
বনানী ১৩ নম্বর রোডে ‘ধাবার’ দই বড়া সবচেয়ে জনপ্রিয়। এখানে এক পিচ দই বড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সাসি মাটন হালিম, তন্দুরি চিকেন, লাম্ব রোস্ট, মোরগ মাসালাম ইফতারির বেশ জনপ্রিয় পদ।
এছাড়া শাহী জিলাপিও পাওয়া যায় এখানে, যা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা করে।
এদিকে হাতের কাছে ভিন্ন পদের ইফতারি পেয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন ক্রেতারাও। তবে দাম নিয়ে কিছুটা অভিযোগ থাকলেও সব পদ এক সঙ্গে পেয়ে সন্তুষ্ট তারা।
বনানীর বাসিন্দা মাহবুব হোসেন বললেন, প্রায়ই বনানী থেকে ইফতার কেনার জন্যে পুরান ঢাকাও যাওয়া হয়। দুই-একটা আইটেম ছাড়া প্রায় সবই এখানে পাওয়া যায়। তবে দাম পুরান ঢাকার তুলনায় কিছুটা বেশি।
এদিকে দেশীয় নানা বাহারি ইফতার সামগ্রীর সঙ্গে পাশ্চত্য পদ মিশিয়ে বিশেষ ইফতারির ব্যবস্থা রেখেছে গুলশান-২ এর বেঙ্গল ব্লু-বেরি রেস্তোরাঁ।
দুইজনের ইফতার ও ডিনার প্যাকেজ পাওয়া যায় ২২০০ টাকায়। রমজান উপলক্ষে পার্সেলের জন্য সিলভার ও গোল্ড প্যাকেজ রেখেছে রেস্তোরাঁটি।
সিলভার প্যাকেজ ৪৫০ টাকাও গোল্ড প্যাকেজ পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ টাকায়, যা রহমান জুড়ে চলবে।
এখানে ইফতার ও ডিনারে থাকছে আফগানি দম বিরিয়ানি, আফগানি মোরগ টিক্কা, গ্লিল্ড ফিশ, এজলিও পাস্তা, চিকেন দো পিৎজা।
ডেজার্ট হিসেবে থাকছে-ধাই ভাদা, গোলাপ জামন, ক্রিম ক্যারোমেল। আর রাইচ পফ, চানা ভুনা, চিকেন শর্মা, ক্রিচপি জিলাপি থাকছে হর্ট ডিশ হিসেবে।
বেঙ্গল ব্লু-বেরি রেস্তোরাঁর বিপণন ব্যবস্থাপক জয় আহসান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গুলশান এলাকা ছাড়াও অন্যান্য এলাকা এবং দেশের বাইরের ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনা করে আলাদা আলাদা ইফতার সামগ্রীর পসরা সাজাই।
‘আমাদের রেস্টুরেন্টে বুফেতে ইফতারি করানো হয়। এর বাইরে পার্সেলের জন্য গোল্ড ও সিলভার প্যাকেজ আছে। তবে রোজায় চাইনিজ খাবার একদম চলে না। ’ বলে জানান তিনি।
বনানীর থাই রেস্তোরাঁ খাথাই মাথাই, ইন্ডিয়ান হ্যানোই, গুলশানের ধানসিঁড়ি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ফুড টোয়েন্টিফোর, এফএনএফ রেস্তোরাসহ আরও অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোতে বাহারি পদের ইফতার সামগ্রীর আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৬
এমসি/এমএ