ঢাকা: ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ২৯০টি গার্মেন্টেসের চালান বিদেশে রফতানি করেছেন। কিন্তু রফতানির বিপরীতে কোনো মুদ্রা দেশে নিয়ে আসেনিনি!
রফতানির সকল সুবিধাও গ্রহণ করেছেন কৌশলে।
রাজধানীর মিরপুর সেনপাড়া পর্বতা এলাকার এসএন ডিজাইন লিমিটেডের মালিক মো. শহীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এভাবেই প্রায় ১শ’ কোটি টাকা অর্থপাচারের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতের পর প্রথমবারের মতো এন্টি মানিলন্ডারিং আইনে প্রতিষ্ঠানটির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
বুধবার (১৫ জুন) মতিঝিল থানায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৫৬ ধারা ও কাস্টমস (শুল্ক) আইন ১৯৬৯ অনুযায়ী এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নম্বর-১৭।
বুধবার (১৫ জুন) সন্ধ্যায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলানিউজকে জানান, প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ বছরে ২৯০টি চালানে গার্মেন্টস পণ্য রফতানি করলেও এর বিপরীতে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনেনি বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
ভুয়া দলিলাদি (ইএএক্সপি) ব্যবহার করে চট্টগ্রামের এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কন্টেইনার ডিপোর মাধ্যমে আবারও রফতানির চেষ্টা করছে এমন অভিযোগ আসে।
গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিষ্ঠানটির ৭টি কন্টেইনার আটক করা হয়। তথ্য যাচাইয়ে ব্যাংকের ইএক্সপি ফর্ম ও এলসি জালিয়াতির তথ্য পাওয়া যায়।
কাস্টমসের এসাইকুডা সিস্টেম থেকে গত পাঁচ বছরের হিসেব নিয়ে দেখা যায়, এর আগে ২৯০টি চালানের কন্টেইনার রফতানি করেছে ব্যাংকের কাগজ জাল করে।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের মতিঝিল শাখা, ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখা ও ন্যাশনাল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার গ্রাহক দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এ জালিয়াতি করে।
প্রতিষ্ঠানটি সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে মেসার্স মনসুর জেনারেল ট্রেডিং ও মেসার্স আল ফাহাদ ট্রেড লাইনস নামক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করে পণ্য রফতানি করেছে।
এভাবে ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনটি ব্যাংকে ২৯০টি চালানে পণ্য রফতানি করে। আরো ৭টি কন্টেইনার পণ্য রফতানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ব্যাংকের কাছে তথ্য চাওয়া হলে ব্যাংক থেকে জানানো হয়, এসএন ডিজাইন লিমিটেড তাদের গ্রাহক নয় ও প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে কোনো ইএক্সপি ইস্যুর তথ্য নেই।
রফতানির শর্ত অনুযায়ী, রফতানির বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাবাসিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। বিদেশের যেকোনো অ্যাকাউন্টে অবৈধভাবে ট্রান্সফার করা হয়েছে।
তিনি জানান, এসব কনটেইনারে নানা ধরনের তৈরি পোশাক রফতানি করা হয়েছে। কিন্তু পেমেন্ট বিদেশে থেকে গেছে। রফতানিকারক দেশের মধ্যে রয়েছে ফিলিপাইন ও ইউনাইটেড আরব আমিরাত।
মামলায় প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী মো. শহিদুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে (বাড়ি ৩৪, রোড ১, সেক্টর ১২, উত্তরা)। তবে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আসামি করা হবে।
প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা ৩৮ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর, ঢাকা দেওয়া থাকলেও এ ঠিকানায় প্রতিষ্ঠানটির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
দি কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯ এর ১৫৬ (৫) ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ ও একই আইনের (সংশোধনী) ২০১৫ অনুযায়ী এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ড. মইনুল খান জানান, ২০১৫ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন (সংশোধনী) অনুযায়ী, কাস্টমস গোয়েন্দাকে তদন্ত করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
অনুসন্ধান, এনবিআর ও অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এনবিআরের অধীনে এটি প্রথম ফৌজদারি মামলা।
মামলাটি শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত করবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বনিম্ন ৪ বছর ও সর্বোচ্চ ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান আছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৬
আরইউ/এএসআর