ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বন্ড সুবিধার অপব্যবহারে ফৌজদারি দণ্ড

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৩ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৬
বন্ড সুবিধার অপব্যবহারে ফৌজদারি দণ্ড

ঢাকা: রপ্তানির জন্য পণ্য উৎপাদনের নামে বিনা শুল্কে বন্ড সুবিধায় আমদানি করা কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য দেশের ভেতরে খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়ার অপরাধ ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে আমলে নিয়ে মামলা করবে সরকার। বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য অবৈধভাবে বাজারজাত করার অপরাধ তদন্তও করা হবে ফৌজদারি অপরাধ তদন্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে।

এ ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তকালে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর বা সহ-পরিদর্শকের ক্ষমতা ভোগ করবেন।  

আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট কার্যকরের দিন, অর্থাৎ আগামী ১ জুলাই থেকে এ প্রক্রিয়ায় বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ জন্য অর্থ আইন, ২০১৬-এর আওতায় শুল্ক আইন, ১৯৬৯-এর ১৫৬ ধারায় নতুন একটি উপধারা সংযোজন করা হয়েছে।  

এতে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার তদন্তে ফৌজদারি প্রক্রিয়া অনুসরণসহ তদন্তকারী শুল্ক কর্মকর্তাদের পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টরের ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই উপধারা কঠোরভাবে প্রয়োগ করলে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও এনবিআরের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে ফৌজদারি আইনে মামলার বিধান আগেও ছিল। কিন্তু এত দিন তার প্রয়োগ করা হয়নি।  

মূলত শুল্ক বিভাগের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের পুলিশের মতো ফৌজদারি আইনে তদন্ত করার ক্ষমতা না থাকায় তাঁদের পক্ষে সঠিকভাবে তদন্ত করা সম্ভব হতো না। ফলে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করেও পার পেয়ে যেত অনেক রপ্তানিকারক। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে যেত। এতে সরকার যেমন একদিকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতো, তেমনি বিনা শুল্কের আমদানি পণ্য খোলা বাজারে কম দামে বিক্রি করায় শুল্ক দিয়ে আনা ব্যবসায়ী ও স্থানীয় উৎপাদকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতো।  

এ অবস্থায় নতুন অর্থবছরের অর্থ বিলে তদন্ত কর্মকর্তাদের পুলিশের মতো পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। প্রস্তাবিত অর্থ আইন, শুল্ক আইন ১৯৬৯-এর ১৫৬ ধারায় বিদ্যমান চারটি উপধারার পর ২০১৬-তে আরো একটি উপধারা যোগ করা হয়েছে। এতে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের ঘটনা তদন্ত সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের আওতায় শুল্ক বিভাগের যেকোনো কর্মকর্তা অপরাধ তদন্ত করতে পারবেন। এ ধরনের তদন্তকারী কর্মকর্তা যখন কোনো ঘটনা যাচাই বা তদন্ত করতে যাবেন, তখন তিনি পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টরের ক্ষমতা ভোগ করবেন এবং তদন্তকালে দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৮৯-এর প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তা প্রয়োগ করতে পারবেন। ’ 

রাজস্ব বোর্ডের এ উদ্যোগের প্রশংসা করে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, শুধু বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারী ব্যবসায়ীকে শাস্তি দিলেই হবে না, এর সঙ্গে জড়িত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনকি খোলাবাজার থেকে বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্যের ক্রেতাদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।  

তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে সরকার সঙ্গে সঙ্গে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়, অপরাধী যত প্রভাবশালীই হোক না কেন। কিন্তু বাংলাদেশে এমন উদ্যোগ আগে নেওয়া হয়নি। তবে সরকার ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বচ্ছতা আনার যে উদ্যোগ নিয়েছে, আমরা তার সাধুবাদ জানাই। তবে যারা বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে এমন শিল্প মালিক বা আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি এই অপরাধে সহায়তাকারী প্রত্যেকের বিরুদ্ধেও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই সরকারের এ উদ্যোগ সফল হবে। ’ 

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারী তিন ধরনের অপরাধ করে। এর প্রথমটি হলো বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য বিক্রির মাধ্যমে সরকারকে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া। দ্বিতীয় অপরাধ হলো বন্ড সুবিধায় আনা পণ্য যখন বিক্রি করা হয়, তখন ওই একই পণ্য শুল্ক দিয়ে যিনি আমদানি করেছেন, তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হন। কারণ শুল্ক দিয়ে আমদানি করা পণ্যে ব্যয় বেশি। এর ফলে স্থানীয় উৎপাদকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি দেশের ভেতরে বিভিন্ন পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়। আর তৃতীয় অপরাধ হলো সরকারের সঙ্গে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অপরাধ। রপ্তানির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ পায়। পরে তা রপ্তানি না করে খোলাবাজারে বিক্রির মাধ্যমে ওই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে প্রতিষ্ঠানটি।  

তিনি আরও বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার অবশ্যই একটি ফৌজদারি অপরাধ। এ ধরনের অপরাধীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা আগে থেকেই আছে। তবে এত দিন তার প্রয়োগ করা হয়নি। আগে এ ধরনের অপরাধ তদন্তে নিয়োজিত শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের পুলিশের মতো ক্ষমতা ছিল না। সে কারণে নতুন অর্থবছরের অর্থ আইনে তদন্ত কর্মকর্তাদের এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তদন্তে ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরার পর ফৌজদারি আইন অনুযায়ী এর বিচার করা সম্ভব। তবে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে যাতে শুল্ক আইনের পাশাপাশি ফৌজদারি আইন প্রয়োগ করা যায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।  

তিনি বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে আইন কড়া করতে হবে। আর সেই আইন প্রয়োগ করতে হবে সর্বোচ্চ কঠোরতার সঙ্গে। এদের কোনোভাবেই ন্যূনতম ছাড় দেওয়া উচিত নয়। কারণ এ ধরনের অপরাধী দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ ও স্থানীয় শিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি। একই সঙ্গে কর ফাঁকিবাজও।   প্রাক-বাজেট আলোচনার সময়ই এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান একাধিকবার বলেছেন, বাংলাদেশে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বেড়ে গেছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারের দেওয়া এ সুবিধার অপব্যবহার করে দেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। তাদের এই অপকর্ম রোধে নতুন বাজেটে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদেরও সহায়তা চেয়েছেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৯ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৬
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।