ঢাকা: বেসরকারি জীবন বিমা কোম্পানি সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রায় ১শ’ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের এই দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদকের বিশেষ টিম।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, সানফ্লাওয়ারের বিরুদ্ধে ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়েছে। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করবেন সহকারী পরিচালক আনোয়ার হোসেন। টিমটির তদারকি করবেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।
দুর্নীতির বিষয়টি সর্ম্পকে মোবাইল ফোনে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সামসুল আলমের কাছে জানতে চাইলে ক্ষেপে উঠে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করছেন কেন, দুককে প্রশ্ন করুন। তারাই বলুক। আপনি এর পেছনে লাগছেন কেন? আপনার লাভ কি?’
‘দুদক এ বিষয়ে আপনার কোম্পানিকে কোনো চিঠি দিয়েছে কি-না’- জানতে চাওয়া হলে তিনি উচ্চকণ্ঠে বলেন, ‘না। এলে ব্যবস্থা নেবো’। এরপর ফোন কেটে দেন তিনি।
দুদক সূত্র মতে, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে কোম্পানির দাখিল করা তথ্যে এমন অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়, কোম্পানির অবৈধ ব্যয়ের কারণেই কোম্পানি চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। সময়মতো গ্রাহকদের দাবি পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে গ্রাহকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অনাস্থার। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি ২০১২ সাল থেকেই অবৈধ ব্যয় কমিয়ে আনতে বেশ কয়েকবার তাগিদ দিয়েছে।
এ দুর্নীতি ছাড়াও সম্প্রতি বিশেষ নিরীক্ষায় কোম্পানির ২০১২, ২০২৩ এবং ২০১৪ সালের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির বিরুদ্ধে ৪শ’ কোটি টাকার দুর্নীতিসহ মোট ২৬ ধরনের অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে আইডিআরএ। যা বিমা আইন ২০১০ এর ২৯ ধারা ও প্রবিধানের লঙ্ঘন। বিমা আইন ও প্রবিধান লঙ্ঘনে বিমা আইন ২০১০ এর ধারা ১০, ৫০, ৯৫ এবং ১৩৪ ধারার বিধান অনুসারে এর বিচার করবে কর্তৃপক্ষও।
অনিয়মগুলো হচ্ছে-মালিকদের পছন্দসই কোম্পানিতে বিনিয়োগের টাকা কোম্পানির লাইফ ইন্স্যুরেন্স ফান্ডে দেখানোর পাশাপাশি নামে-বেনামে নিজেদের ইচ্ছেমতো ভুয়া এজেন্টের নামে কমিশন দিয়ে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও বছরের পর বছর অনাদায়ী টাকা কালেকশন ইন হ্যান্ড খাতে দেখানো, এ কোম্পানির টাকা বিনিয়োগের নামে অন্য কোম্পানিতে স্থানান্তর করেও লাইফ ইন্স্যুরেন্স ফান্ডে দেখানো, টাকা জমা না দিয়ে ব্যাংকের হিসাবে টাকা দেখানো এবং নিষিদ্ধ কোম্পানিতে আমানত বিনিয়োগ ইত্যাদি।
পলিসি হোল্ডারদের কষ্টে উপার্জিত এ টাকা উদ্যোক্তা পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের যোগসাজশে প্রতিনিয়তই হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে- এমনই তথ্য বের হয়ে এসেছে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মেজর (অব) আব্দুল মান্নান। বাকি পরিচালকরা তার আত্মীয়-স্বজন।
** ১৭ বিমা কোম্পানির দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক
** আত্মীয়-স্বজন মিলেমিশে লুটপাট সানফ্লাওয়ার লাইফে!
** গ্রাহকের টাকা লুটে খাচ্ছে সানফ্লাওয়ার লাইফ
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৭ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৬
এমএফআই/এএসআর