ঢাকা: দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা ও বিনিয়োগের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জঙ্গিবিরোধী মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
বাংলাদেশ থেকে দু’টি আর্ন্তজাতিক সম্মেলন বাতিল ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগমন কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে এমন সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
আগামী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের পর ঢাকায় অনুেষ্ঠয় এই ‘মহাসমাবেশ’ কর্মসূচিতে শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি করা হবে। এজন্য সম্প্রতি এফবিসিসিআইয়ের ‘আইনশৃঙ্খলা ও চোরাকারবারি প্রতিরোধ’ সংক্রান্ত স্টান্ডিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কমিটির চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইর সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সারাদেশের ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে করা এটি হবে ব্যবসায়ীদের এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সারাদেশের চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনসহ ৪৩৫টি বাণিজ্যিক সংগঠনে জঙ্গিবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে। এতে জঙ্গিবিরোধী মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য, রফতানি, বিনিয়োগ ও সর্বোপরি দেশের অর্থনীতির স্বার্থে দেশ থেকে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ দূর করতে হবে।
কাশেম আহমেদ বলেন, ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং পল্লী কবি জসীম উদদীনের কবিতা, গান, নাটক, ছবি আঁকাসহ দেশীয় সংস্কৃতি ও শিল্প চর্চা হয়, সে বিষয়ে সরকারের কাছে একটি প্রস্তাব দেওয়া হবে। সমাবেশের আগে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে জঙ্গিবিরোধী সেমিনার করা হবে।
জানা যায়, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি, শোলাকিয়া এবং সর্বশেষ কল্যাণপুরে বড় ধরনের জঙ্গি তৎপরতার ঘটনায় ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে দ্বি-পক্ষীয় বাণিজ্য এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন উদ্যোক্তারা।
পোশাক খাতের ক্রেতারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ ঘরোয়া বৈঠকগুলোও করছেন বাংলাদেশের বাইরে। এই বাস্তবতায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন চাচ্ছেন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। বাতিল করা হয়েছে অর্থপাচার প্রতিরোধের আর্ন্তজাতিক সংগঠন এপিজির সভায়।
১ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) ৬২তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ব্যবসায়ীরা এই সমাবেশ করার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোও যাতে জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে আরও বেশি সক্রিয় হয়, সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় এফবিসিসিআইয়ের ‘আইনশৃঙ্খলা ও চোরাকারবারি প্রতিরোধ’ সংক্রান্ত স্টান্ডিং কমিটি সারাদেশের বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রায় দুই শতাধিক ব্যবসায়ী নেতাকে নিয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী বৈঠক করেছেন।
এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের সবাই আজ জঙ্গি মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ। জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও এগিয়ে আসছেন। এফবিসিসিআই থেকেও জঙ্গিবিরোধী জাতীয় মহাসম্মেলন করা হবে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ।
তিনি বলেন, জাঙ্গবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বই এই সংকটের মধ্যে রয়েছে। হলি আর্টিজান, শোলাকিয়া ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে জঙ্গি নির্মূলে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৬
এসই/টিআই