ঢাকা: দারিদ্র্যের ফাঁদ থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উদ্ধারের কৌশল নিতে সরকারের কাছে সুপারিশমালা তুলে ধরেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
সোমবার (২২ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি ভবন মিলনায়তনে ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়, বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নতা প্রান্তিকতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় তিনি এসব সুপারিশ করেন।
কর্মশালার মূল প্রবন্ধে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বৈশ্বিক উন্নয়নে একটি নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। তা হলো কাউকে পেছনে ফেলে নয়, বরং যারা সবচেয়ে পেছনে তাদের আগে টেনে আনতে হবে’।
‘উন্নয়ন থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন না রেখে প্রান্তিকতা দূর করতে হবে। সবাইকে সম্মানিত করতে হবে। এসডিজি অর্জনে উন্নয়ন ধারায় এ বাড়তি ধারণা যোগ করা হয়েছে অগ্রযাত্রার মূলমন্ত্রে’।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে কয়েকটি স্তর রয়েছে। সত্তর ও আশির দশকের আগে দরিদ্র বলা হতো সার্বিকভাবে। এরপর থেকে তাদের বলা হয়েছে অতিদরিদ্র। এখন আর অতিদরিদ্র নেই, বলা হয় না’।
‘এক সময় মানুষ ক'বেলা খেয়েছে জানতে চাওয়া হতো? এখন সে পরিস্থিতি নেই। কিন্তু এখন দারিদ্র্যের ফাঁদ তৈরি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বিচ্ছিন্নতা ও প্রান্তিকতা। দৃষ্টিভঙ্গির বিচ্ছিন্নতা। নব্বই দশকের আগে চরম দারিদ্র্য শব্দ ব্যবহার হতো না। এখন সেটি এসেছে। আসলে চরম দারিদ্র্যই হচ্ছে দারিদ্র্যের ফাঁদ’।
বিচ্ছিন্নতার বাধা দূর করার সুপারিশ তুল ধরে হোসেন জিল্লুর বলে, ‘বিচ্ছিন্নতার বাধাই হচ্ছে দারিদ্র্য ফাঁদ। বিচ্ছিন্নতা ও প্রান্তিকতার বোঝা দূর করতে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে এসডিজি অর্জনে’।
তিন ধরনের বাধা দূর করার সুপারিশ তুলে ধরে হোসেন জিল্লুর বলেন, ‘প্রান্তিকতা ও বিচ্ছিন্নতার প্রথম বোঝা উচ্ছেদের ভয়। যেটি তাদের অস্তিত্বের বিষয়। দ্বিতীয় বোঝা চিকিৎসা, শিক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্বল্পতা।
তৃতীয় বোঝা হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সুনির্দিষ্টভাবে পরিসংখ্যানে অনুপস্থিত। জাতীয়ভাবে পরিসংখ্যানে উপস্থিতি নেই প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর। এ থেকে উত্তরণ করতে হলে এ বোঝা দূর করতে হবে’।
‘ক্ষমতা ও সম্পদ যাদের কাছে আছে, তাদের সঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কমিউনিকেশন গ্যাপ দূর করতে হবে’।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। স্বাগত বক্তব্য দেন সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের (সেড) পরিচালক ফিলিপ গায়েন।
সেড সভাপতি অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী খানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. ওয়াহিদুদ্দিন মাহমুদ, রিব’র সহ সভাপতি ড. হামিদা হোসেন, পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল করিম।
আলোচনায় অংশ নেন লেখক ড. হরিশংকর জলদাস, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভোজন কৈরি, বিবিএস’র সহকারী পরিচালক ড. দিপঙ্কর রায়। প্রান্তিকজনের প্রতিনিধি হিসেব আলোচনায় অংশ নেন যৌনকর্মীদের প্রতিনিধি হাজেরা বেগম ও জেলে প্রতিনিধি সৌদ খান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৬
এসএমএ/এএসআর