ঢাকা: আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে চামড়ার দর নির্ধারণে দফায় দফায় বৈঠক করছে চামড়া ও ট্যানারি ব্যবসা সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি সমন্বয় করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন এনডিসি।
এদিকে ‘সহনশীল সময় পর্যন্ত’ হাজারীবাগে কোরবানির পশুর চামড়া প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে ট্যানারি মালিকেরা। চামড়া ব্যবসায়ীদের অনুরোধে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ এর মধ্যস্ততায় ট্যানারি মালিকদের এ সুযোগ দিতে রাজী হয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
তবে এ সুযোগ সাময়িক ও স্বল্প সময়ের জন্য। কোন সময়সীমার মধ্যে না ফেলে এটাকে ‘সহনশীল সময় পর্যন্ত’ বলে অভিহিত করেছে মন্ত্রণালয় সূত্র।
এদিকে দাম নির্ধারণে বৈঠক করছে সেগুলো হলো, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফিনিশিড লেদার গুডস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ চামড়া ব্যবসায়ী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন।
দেশের মোট চামড়ার ৬৫ ভাগই কোরবানির পশু থেকে সংগ্রহ করা হয় উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা জানান, এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ ট্যানারিই হাজারীবাগ থেকে সাভারের চামড়া শিল্প পল্লীতে কারখানা স্থানান্তর সম্পন্ন করতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোতে চামড়া ঢুকতে না দিলে চামড়া পঁচে নষ্ট হবে (!)যুক্তিতে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে হাজারীবাগে চামড়া নেওয়ার জন্য এক মাসের সময় চান ব্যবসায়ীরা। এরই প্রেক্ষিতে শিল্পমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাণিজ্য মন্ত্রী।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এখন পর্যন্ত হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুরে ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য ১২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮৬ কোটি ১২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। নতুন এই চামড়া শিল্প নগরী থেকে ‘ক্রাস্ট ও ফিনিশড’ লেদার রপ্তানি করলে সরকার বাড়তি ৫ ভাগ নগদ প্রণোদনারও ঘোষণা দিয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করবে অর্থ বিভাগ।
উল্লেখ্য বর্তমানে চামড়া ও চামড়া জাত পণ্য রপ্তানিতে শতকরা ১৫ ভাগ নগদ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সরকার।
চামড়ার দাম প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে গত বছরের তুলনায় এবার ৪৫ ভাগ দাম কমানোর দাবি উঠেছে। যদিও মন্ত্রণালয় তা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশ্ববাজারে চামড়ার দরের ৪০ ভাগ পতন ও লবণের দর অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায়, ব্যবসায়ীরা এ দাবি তোলেন।
বাংলাদেশ ফিনিসড লেদার গুডস ম্যানুফ্যাকচারার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন মাহিন এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবারই নতুন দর ঘোষণা করা হবে। তবে কখন কোথায় দর ঘোষণা করা হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। সময় মতো বিষয়টি জানানো হবে।
২০১৫ সালে ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছিলেন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ঢাকার বাইরে এর দাম ছিল ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা। প্রতি বর্গফুট লবণ যুক্ত মহিষের চামড়ার দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। খাসীর চামড়ার দাম ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা। আর বকরি ও ভেড়ার চামড়ার দাম ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা।
২০১৪ সালে ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতিফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া কেনেন ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। ঢাকার বাইরে এ দর ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত মহিষের চামড়ার দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, খাসির চামড়ার দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ও বকরির চামড়ার দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
আবার ২০১৩ সালে দাম ছিল আরো বেশি তখন ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। ঢাকার বাইরে এর দর ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা।
বাংলাদেশ সময় ১৯৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৬
আরএম/আরআই