রাজশাহী: রাজশাহীতে পাড়া-মহল্লা থেকে বেশি দামে কোরবানির পশুর চামড়া কিনে মাথায় হাত পড়েছে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের। আড়তগুলো সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে যাচ্ছে না।
চামড়াপ্রতি ৬শ’ টাকা থেকে ৭শ’ টাকা লোকসান হওয়ায় মৌসুমী ব্যবসায়ীদের লাভ দূরে থাক, লগ্নিকৃত পুঁজিতেই টান পড়ছে।
এবার ব্যাংক ঋণ নেই এবং স্থানান্তরের অজুহাতে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে গত বছরের বকেয়া টাকা পাননি স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। ফলে এলাকায় গিয়ে সেভাবে চামড়া কিনতে পারেননি তারা। ফাঁকা মাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। না বুঝে-শুনে ইচ্ছেমতো দামে চামড়া কিনে এখন বিপদে পড়েছেন।
রাজশাহী মহানগরীর সিরোইল এলাকার মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী আবদুল মজিদ জানান, ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে বড় বোনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ২/৩ জনকে সঙ্গে নিয়ে চামড়া কিনতে মাঠে নামেন তিনি। কিন্তু চামড়া কেনার পর এখন আড়তে গিয়ে আর সেই দাম পাচ্ছেন না। তারা সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ৭শ’ টাকা পর্যন্ত দরে চামড়া কিনে ফেলেছেন। কিন্তু আড়ত মালিকরা সেসব চামড়া ৯শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা বলছেন। আর লবণযুক্ত চামড়া ১ হাজার ১শ’ টাকার বেশি দাম দিতে চাচ্ছেন না। ফলে লাভ তো দূরের কথা, কিভাবে পুঁজির টাকা ফিরিয়ে বোনের হাতে তুলে দেবেন সেই চিন্তায় কাল থেকে ঘুম হয়নি তার।
রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, অদৃশ্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাড়া-মহল্লা থেকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা প্রায় ৮০ শতাংশ চামড়াই কিনে নিয়েছেন। কিন্তু ওই চামড়ার একটি বড় অংশ এখনও তাদের হাতেই রয়েছে। লোকসানের ভয়ে বেশি দাম চাওয়ায় তাদের কাছ থেকে চামড়া কিনছে না আড়তগুলো। ফলে তারা চামড়া নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন।
রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রৌফ বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত প্রতি বছর ঈদে ৮০ থেকে ৯০ হাজার গরু-মহিষ ও প্রায় দেড় লাখ খাসি-ভেড়া কোরবানি হয়ে থাকে জেলায়। বিপুল পরিমাণ এই চামড়া তারা কিনে লবণ দিয়ে কয়েকদিন সংরক্ষণের পর নাটোরের আড়তগুলোতে নিয়ে যান। ঢাকার ট্যানারি মালিকরা সেখান থেকে চামড়া কিনে নিয়ে যান।
এবার সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী লবণযুক্ত চামড়া ৪০টাকা বর্গফুট দরেই কিনছেন তারা। লবণ ছাড়া চামড়া আরও ১০ টাকা কমে কিনছেন। একটি বড় গরুর চামড়া স্বাভাবিকভাবে ২৮ বর্গফুট হয়। সেই হিসেবে চামড়ার দাম আসে ১ হাজার ১শ’ ২০ টাকা। এখন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা যতো বেশি দামেই চামড়া কিনুন, এর চেয়ে বেশি দামে তাদের কাছ থেকে চামড়া কেনা ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া কিনেছেন। কিন্তু তাদের হাতে চামড়া গেলে অনেক সময় কোনো খোঁজ থাকে না। অনেকেই আছেন যারা ক্ষতিতে চামড়া বিক্রি করবেন না। তারা সীমান্ত দিয়ে পাচারের চেষ্টা করবেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন আবদুর রৌফ।
এবার লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট সর্বোচ্চ ৫০ টাকা ও রাজধানীর বাইরের জন্য রাখা হয়েছে ৪০ টাকা। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট সর্বোচ্চ ২০ টাকা, বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ টাকা ও মহিষের চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৬
এসএস/এএসআর