ঢাকা: রাজধানীসহ সারা দেশে ৩৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয় করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। ভূমিকম্প সহনীয় শহর গড়তে একটি দক্ষ ও কার্যকরী শহরের পরিকল্পনা কৌশল তৈরি করে তা প্রচারেরও উদ্যোগ নিয়েছে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই)।
বাংলাদেশের জনসাধারণের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে ভূমিকম্প ও মাধ্যাকর্ষণ বলজনিত প্রতিরোধ ও প্রশমন সক্ষমতা বাড়ানো হবে। শহরের শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক জ্ঞান বৃদ্ধি করবে এইচবিআরআই।
এইচবিআরআই সূত্র জানায়, বাড়ি ও বহুতল ভবন নির্মাণে ছাদ ঢালাইয়ে আর ভাঙা ইট ব্যবহার করা হবে না। পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (পিডব্লিউডি) এখন থেকে সকল ভবনের ঢালাই কাজে পাথর ব্যবহার করবে।
যেসব বাড়ির ছাদ ইট দিয়ে ঢালাই করা হয়েছে, সেগুলোও টেকসই করতে নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করতে যাচ্ছে এইচবিআরআই। এ লক্ষ্যেই গবেষণার কাজ হাতে নিয়েছে এইচবিআরআই।
এইচবিআরআই’র পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাদেক বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভূমিকম্প সহনীয় শহর গড়ার উদ্যোগ প্রথমেই ঢাকা শহরে গ্রহণ করবো। এখন থেকে কোনো ভবনে ইট ব্যবহার করবো না। সকল ভবনেই পাথর ব্যবহার করবো। আমরা দেখেছি, পৃথিবীর কোনো দেশই ভবন নির্মাণে ইট ব্যবহার করে না, পাথর ব্যবহার করে। আমরাও সেই পথে হাঁটছি। তবে কিভাবে পাথরের ব্যবহার কম করা যায়, সে বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। যে বাড়িটি ইতোমধ্যেই ইট দিয়ে নির্মিত হয়ে গেছে, তা টেকসই করারও পথ বের করতে যাচ্ছি’।
এইচবিআরআই সূত্র জানায়, রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও তাদের কাজের পরিবেশের উন্নয়নে কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ইউরোপ ও আমেরিকার রি-টেইলারদের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ অ্যাকর্ড ফর ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি' এবং ‘অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি' নামে দু’টি কর্মসূচি চলছে। ‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’ এর মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোও কাজ করছে।
তাদের মতে, বাংলাদেশে সাত হাজারেরও বেশি কারখানা পোশাক তৈরি করে৷ এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর জন্য পোশাক তৈরি করে তিন হাজার কারখানা। কিন্তু ১ হাজার ৮০০টির মতো কারখানা বাদে বাকি কারখানাগুলোর শ্রমিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
এসব চিন্তা করেই এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে এইচবিআরআই।
সূত্র জানায়, ঢাকা শহর এলাকার ভবনগুলোর ভূমিকম্পের ঝুঁকি ও কর্মক্ষমতা সম্পর্কিত ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। ঢাকা শহরের মাঠ জরিপ ও ডাটাবেজের মাধ্যমে প্রতিটি ভবনের কর্মদক্ষতা ও ঝুঁকির ভিত্তিতে করে আলাদাভাবে এ ডাটাবেজ তৈরির প্রস্তুতি চলছে। এতে ভবনের ব্যবহার, তলার সংখ্যা, নির্মাণের সময়, নকশা, আয়ুষ্কাল উল্লেখ থাকবে বলে জানিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভূমিকম্প ঝুঁকি এড়াতে ভবনের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নির্মাণের প্রচলিত পদ্ধতি ও ভবন নির্মাণ কৌশল উল্লেখ থাকবে। ভবন যেন বিধ্বস্ত না হয়, সেজন্য ভূমিকম্প সহনশীলতা মূল্যায়নের পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা ও তা একটি পাইলট ভবনে প্রয়োগ করা হবে।
ভবনের প্রকৃত কর্মক্ষমতা বোঝার জন্য ঢাকার নির্বাচিত ভবনগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি ভবনের ফুল স্কেল কাঠামোও পরীক্ষা করবে মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, ভূতাত্ত্বিকভাবে বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান, ইউরোশিয়ান এবং বার্মিজ টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত। এগুলোতে অনেক ফল্ট রয়েছে, যা ভূমিকম্পের উৎস। এ দেশে গত ১৫০ বছরে সাতটি বড় আকারের ৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হয়েছে।
নিকট ভবিষ্যতেও বড় আকারের ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষজ্ঞরা। এ ধরনের ভূমিকম্প হলে দেশের বিশেষ করে নগর এলাকায় অবকাঠামো ভেঙে পড়াসহ জান-মালের অনেক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ভবন অবকাঠামো নির্মাণকালে যথাযথ পরিকল্পনা, ডিজাইন ও মান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে ক্ষতি কমিয়ে আনবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর