ঢাকা: শর্তানুযায়ী ছুটি নিয়ে কর্মস্থলে যোগদান না করা, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা অর্জন করায় বিসিএস কাস্টমস কমিশনার এম হাফিজুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের উপ-সচিব মো. হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সম্প্রতি দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা কর পরিদর্শন পরিদফতরের উপ-মহাপরিচালক বিদ্যুৎ নারায়ণ সরকারকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ) ক্যাডারের কর্মকর্তা (কমিশনার অব কাস্টমস) এম হাফিজুর রহমান (চলতি দায়িত্ব) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে যুক্তরাজ্যে কোভেন্টারি ইউনিভার্সিতে মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কোর্সে অধ্যয়নের জন্য ছুটি নেন।
এম হাফিজুর রহমানের ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষা ছুটি ও ২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে একই বছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত বহি: বাংলাদেশ ছুটি (অর্জিত ছুটি) মঞ্জুর হয়।
শিক্ষা ছুটির শর্তানুযায়ী কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশনা সত্ত্বেও তিনি ছুটি শেষে নির্দিষ্ট সময়ে দেশে না এসে কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে বিধি বহির্ভূতভাবে বিদেশে অবস্থান করেন।
এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা অর্জন করায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল), ১৯৮৫ এর ১১ বিধি অনুযায়ী তাকে বরখাস্ত করা হয়।
সূত্র আরো জানায়, হাফিজুর রহমান দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ‘বেস্ট লজিস্টিক লিমিটেড’ নামে একটি ফ্রেইট ফরোয়ার্র্ডিং প্রতিষ্ঠানের ৭৫ শতাংশ মালিকানা অর্জন করেন। অবৈধ অর্থে একাধিক ফ্লাট ক্রয়, দুবাই ও লন্ডনে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থে এফডিআর ও সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে তদন্তে প্রমাণিত হয়।
অসদাচরণ, ডিজারশান ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। নোটিশের জবাব দেননি তিনি।
সূত্র আরো জানায়, হাফিজুর রহমান জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অর্থে এফডিআর ক্রয়, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৪টি যৌথ হিসাব, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৫টি যৌথ হিসাব, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৫টি যৌথ হিসাব, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪টি যৌথ হিসাব ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১টি যৌথ হিসেবে অপ্রদর্শিত অর্থ থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তদন্তে। তবে উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় তদন্ত কমিটি কোনো মতামত দেয়নি।
দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তদন্ত কমিটি বিধি ৭(৬) অনুযায়ী কেন তাকে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না তার কাছে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর লিখিত জবাব চায়।
২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে হাফিজুর রহমান বেস্ট লজিস্টিক লিমিটেডের মালিকানা অর্জন, মা, স্ত্রী ও বন্ধুর নামে আলাদা আলাদা এফডিআর রয়েছে বলে স্বীকার করেন। তবে এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অর্থ খুঁজে পায় তদন্তকারী দল।
হাফিজুর রহমানকে বরখাস্তে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের মতামত চাওয়া হলে ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই একমত পোষণ করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি বরখাস্তের আদেশ অনুমোদন করেন।
পরে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫ এর বিধি ৪ (৩) অনুযায়ী ২০১৪ সালের ১৫ মার্চ তারিখ হতে হাফিজুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়। ২০১৫ সালে দুর্নীতির দায়ে জাহিদুল ইসলাম নামে এক সহকারী কর কমিশনারকে বরখাস্ত ও সম্প্রতি একই অভিযোগ বেশ কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬
আরইউ/এমজেএফ/