বেনাপোল(যশোর): বেনাপোল বন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রধান নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এম সাফায়েত হোসেন বলেছেন, কোনো দুর্ঘটনা নয় অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণেই বেনাপোল বন্দরের ২৩ নম্বর পণ্য গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় ১৩৭ জন আমদানিকারকের ১৮ কোটি ৫০ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৬ টাকার আমদানি পণ্য পুড়ে গেছে।
বুধবার (০৫ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টায় সাংবাদিক সম্মেলনে বন্দরে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ২৩ নম্বর পণ্য গুদাম দুইদিন ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তদন্ত দলের প্রধান এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, তদন্ত দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে তিনি দুইদিন পুড়ে যাওয়া পণ্য গুদামের আলামত দেখেছেন এবং বন্দর সংশিষ্ট বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এসব আলামত দেখে মনে হচ্ছে না এ অগ্নিকাণ্ড বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে হয়েছে।
তিনি বলেন, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে বন্দরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলায় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।
কেমিকেল পণ্যের জন্য বন্দরে আলাদা পণ্যগার থাকলেও সাধারণ পণ্যের (গার্মেন্টস) গুদামে কেমিকেল পণ্য রাখা হয়েছে। গুদামের যেখানে সেখানে পড়ে রয়েছে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ। কাগজপত্র বিহীন অবৈধ মালও ছিল ওই পণ্য গুদামে। এ বন্দর কেআইপির আওতাভুক্ত থাকলেও অনিয়ম করে বন্দরের আশপাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাঠ ও বসতবাড়ি। বন্দরের মধ্যে সাধারণ মানুষের রয়েছে অবাধ যাতায়াত। তবে এ তদন্ত এখানে শেষ নয়, এখনও চলবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, বেনাপোল বন্দর আছে বলে সংশিষ্ট অনেক মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। তাই আগামীতে যেন এরকম ঘটনা আর না ঘটে তার জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ী, বন্দর, কাস্টমস ও সাংবাদিক সবার নজর রাখতে হবে।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা অনিয়মের কোনো তথ্য পেলে সরাসরি আমাদের মন্ত্রণালয়কে জানাবেন। আপনাদের জন্য দরজা সব সময় খোলা।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক পরিমল দত্ত বলেন, পুড়ে যাওয়া পণ্য গুদামে তদন্তের কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন বৈদ্যুতিক লাইনের কাট আউট খোলা ছিল। তাই শর্ট সার্কিটের প্রশ্নই আসেনা। এছাড়া ওই পণ্য গুদামে কাগজপত্র বিহীন ৫টি মূতি পাওয়া গেছে। রয়েছে ১৭৬টি পাইপের অবৈধ আমদানি পণ্যের চালান। শুল্ক ফাঁকির উদ্দেশ্যে এসব মাল সেখানে রাখা হতে পারে। তাই এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতামূলকও হতে পারে বলে জানান তিনি।
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত আমদানিকারকদের ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক জামাল হোসেন।
তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন। কিন্তু বন্দরের যে গুদামে আমদানি পণ্য রাখা হয়, সে গুদামের কোন ইনস্যুরেন্স ব্যবস্থা বন্দর কর্তৃপক্ষের নেই। এ কারণে গত দুই দশকে বেনাপোল বন্দরে বড় ধরনের ৬টি অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীরা প্রায় হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হলেও কোনো আমদানিকারক ক্ষতিপূরণ পায়নি।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ল্যান্ড পোর্ট সচিব হাবিবুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুস ছালাম, বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল ও স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা।
এর আগে, ০২ আক্টোবর ভোর ৬টার দিকে বন্দরের ২৩ নম্বর পণ্যগারে আগুন লাগে। এতে আমদানিকারকের আমদানি পণ্য এবং বেনাপোল-কলকাতা সড়কে রাখা ভারতীয় দু’টি ট্রাক ও একটি প্রাইভেটকার পুড়ে যায়। পুড়ে যায় পোর্ট থানা ভবনের একাংশ। ফায়ার সার্ভিস ৫ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিভাতে পারলেও পণ্য গুদামের কোনো পণ্য রক্ষা করা যায়নি। আগুনের কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে ওই দিন বিকেলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এম সাফায়েত হোসেনকে প্রধান করে পৃথক ৪টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৬
এজেডএইচ/আরএ