খুলনা: কর্মস্থল ত্যাগের আগে শেষ কর্মদিবসেও খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) কাজী নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিজের পদায়ন ও বদলির নির্দেশনা পাওয়ার পরও ঘুষ নিয়ে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে (ওসিএলএসডি) বদলির আদেশ দিয়েছেন এই আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকতা।
কিন্তু বদলি বা পদায়নের আদেশের পর অধস্তন কর্মকর্তাদের বদলির আদেশ দেওয়া আইন সম্মত নয় বলে তাদের মত।
সম্প্রতি ‘আপাদমস্তক’ দুনীতিতে মোড়া আলোচিত এ কর্মকর্তাকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) পদে পদায়ন করেছে সরকার।
আর খুলনায় তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) এস এম মুহসিন। গত ৪ অক্টোবর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে নুরুল ইসলামের বদলির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুর্নীতিবাজ কাজী নুরুল ইসলাম নিজের পদায়নের খবর জানতে পেরে ঘুষ বাণিজ্যে ‘বেসামাল’ হয়ে পড়েন।
আদেশ পাওয়ার পর নিজ বাসায় গত ৪ অক্টোবর (মঙ্গলবার) তার সিন্ডিকেটের ৮ সদস্যের কয়েকজনকে নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। এরপরই ওই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে ‘অবৈধ’ বদলির নির্দেশ দেন।
ওই রাতেই বাসায় বসে ফাইল সই করে কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে নির্ভরযোগ্য এ সূত্রটি।
জানা যায়, খুলনা বিভাগীয় খাদ্য পরিদর্শক সমিতির ভিপি ও নড়াইল সদর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মনিরুল হাসানকে বাগেরহাট সদরে, বাগেরহাট সদর গুদামের ওসিএলএসডি রবিউল ইসলামকে খুলনার রূপসা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে, সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা খাদ্য গুদামে পুরাতন চাল কিনে ও কৃষকের পরিবর্তে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান কিনে আলোচিত তৈয়বুর রহমানকে যশোরের নাভারণ খাদ্য গুদামে এবং নাভারণ খাদ্য গুদামের মঞ্জুরুল ইসলামকে যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
যশোরের খাজুরা খাদ্য গুদামের সুশান্ত কুমারকে বদলি করা হয়েছে পাটকেলঘাটা খাদ্য গুদামে। এছাড়া খুলনা বিভাগের আরও ৫-৭ টি খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানায় সূত্র।
সূত্র বলছে, ব্যাংক লোন, সুদে টাকা কিংবা স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে কাজী নুরুল ইসলামের চাহিদা মতো ঘুষ দিয়ে পোস্টিং পান এসব কর্মকর্তা।
পরে কোনো কারণ ছাড়াই ফের তাদের বদলি করা হয়। যা চরম অবিচারের সমান।
তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কাজী নুরুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
খুলনা বিভাগীয় খাদ্য পরিদর্শক সমিতির একজন নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘মহাদুর্নীতিবাজ আরসি ফুড কোটি কোটি টাকা ঘুষ-বাণিজ্য করে বিদেশে থাকা ছেলে-মেয়ের কাছে টাকা পাচার করছেন। ’
মিটিং করে সমিতির নেতারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
‘তবে পদায়নের আদেশ পাওয়া খুলনার আরসি ফুডের শেষ কর্মদিবসের বদলি আদেশ কার্যকর হবে না,’ বলেই মনে করেন বাংলাদেশ খাদ্য পরিদর্শক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে আমরা খাদ্যমন্ত্রী, খাদ্য সচিব ও খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। ’
‘আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৬
এমআরএম/এমএ