ঢাকা: শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে ভুয়া প্রচারণা বন্ধে গত বছরের ১৭ মার্চ ডাচ-বাংলা ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে গণমাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ হলেও চলছে বিলবোর্ডে।
ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের এ প্রতারণামূলক প্রচারণার বিশাল বিশাল বিলবোর্ড এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানীয় সড়ক-মহাসড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিস-আদালতের মাঠে টানানো রয়েছে।
অনেকেরই অজানা, কিভাবে কতো টাকা বৃত্তি দেয় ব্যাংকটি।
সম্প্রতি যশোরের শার্শা ও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা এবং ফরিদপুর সদর উপজেলার মমিনখাঁর হাট ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, মহাসড়কের পাশে ও ইউনিয়ন পরিষদের মাঠ থেকে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এসব বিলবোর্ড এখনো সরানো হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানে আসা মানুষজন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শিক্ষাবৃত্তির বিলবোর্ড দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
যশোরের শার্শা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে রয়েছে একটি বিলবোর্ড। ঢাকা-বেনাপোল রুটে চলাচলকারী ঈগল পরিবহনের চালক আবুল খায়ের বলেন, ‘সড়কের পাশে এ ধরনের বিলবোর্ডগুলো গাড়ি চালানোয় বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। বড় বড় বিলবোর্ড পাশে থাকায় সেখানে নজর পড়ে। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে’।
বিলবোর্ডে লেখা রয়েছে- ‘ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ১০২ কোটি টাকার বাৎসরিক শিক্ষাবৃত্তি হোক দীপ্তিময় জীবনের স্বপ্নপূরণের সেতুবন্ধন’।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিএসআর কার্যক্রমের আওতায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৬টি ক্যাটাগরিতে সমাজের গরিব, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে শুধু শিক্ষাখাতে ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছে মোট সিএসআরের ৩০ শতাংশ।
কিন্তু ডাচ-বাংলা ব্যাংক বছরে ১৭ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তি দিলেও ১০২ কোটি টাকা দেওয়ার কথা প্রচার করে আসছিল। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে আসার পর গত বছরের ১৭ মার্চ চিঠি দিয়ে এ ধরনের প্রতারণামূলক প্রচার বন্ধের নির্দেশ দেয়।
ডাচ-বাংলা ব্যাংককে দেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনাদের ব্যাংকের এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রদত্ত বৃত্তির পরিমাণ সম্পর্কে ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়’।
‘আপনাদের শিক্ষাবৃত্তি বিষয়ক বিজ্ঞাপনগুলো দ্রুত সংশোধন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে’।
চিঠিতে বলা হয়, ‘সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি’ সম্পর্কিত বিজ্ঞাপনগুলো বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, প্রিন্ট মিডিয়া ও বিলবোর্ড প্রচারের ব্যয় নির্বাহের জন্য এবং ভৌত অবকাঠামো বিনির্মাণে পৃথকভাবে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে’।
‘একই সঙ্গে সব ধরনের সিএসআর প্রকল্পের কার্যক্রম শেষে ‘পরিসমাপ্তি সনদ’ গ্রহণের বিধান রেখে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে কার্যক্রম চালাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করার পরামর্শ দেওয়া হলো’।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠি দেওয়ার পর গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপন সংশোধন করে প্রচার করা হলেও এখনো সরানো হয়নি বিলবোর্ডগুলো। মহাসড়ক ছাড়াও দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেবা প্রতিষ্ঠানের মাঠে দেখা গেছে এসব বিলবোর্ড।
ফরিদপুর সদর উপজেলার মাধবদিয়া ময়েজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশেই মমিনখাঁর হাট। এ হাটে লাগানো রয়েছে একটি বিলবোর্ড।
হাটের ব্যবসায়ী আশরাফ আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন আগে বিলবোর্ডটি লাগানো হলেও আমাদের এলাকার কোনো ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষাবৃত্তি দেয়নি ডাচ বাংলা ব্যাংক। কিভাবে তারা টাকা দেয়, তাও এলাকার কেউ জানেন না’।
শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে প্রতারণামূলক প্রচারণা এখনো কেন চলছে- জানতে চাইলে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে শামসি তাবরেজ বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য নিতে হলে লিখিত আবেদন করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৬
এসই/এএসআর