ঢাকা: বর্তমানে বাংলাদেশে ২৪টি আপদকালীন গোডাউনে সার সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়। এসব গোডাউনের সাধারণ ও সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ১ দশমিক ৪৩ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৯৩ লাখ মেট্রিক টন।
প্রায় ২ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন সার সব সময় খোলা জায়গায় রাখা হয়। খোলা জায়গায় রাখার ফলে ইউরিয়া সারের গুণাগত মান নষ্ট হয়। এমনকি পুরাতন এসব গোডাউনগুলো সার সংরক্ষণের জন্য নিরাপদ নয় বলে জানায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।
বিসিআইসি থেকে জানা যায়, সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর্দ্রতার কারণেও নষ্ট হচ্ছে সার। ফলে সময় মতো কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা যাচ্ছে না। প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিবছর গোডাউন ভাড়া ও রি-ব্যাগিং বাবদও ২৩৪ কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। খোলা স্থানে ইউরিয়া সার রাখলে, সেই সার ব্যবহারে কৃষকের জমিতে ভালো ফলনে সহায়ক হয় না।
ইউরিয়া সারের সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করা ও নিরাপদে সার সংরক্ষণের জন্য দেশের ১৩ স্থানে আরও ১৩টি বাফার গোডাউন নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিআইসি। এসব গোডাউনে ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার সংরক্ষণ করা হবে। প্রতিটি গোডাউনের সার সংরক্ষণ করা হবে ১০ মেট্রিক টন।
নীলফামারী, সুনামগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ, যশোর, চাপাইনবাবগঞ্জ, নেত্রকোনা, পঞ্চগড়, পাবনা, রাজবাড়ী ও শেরপুর জেলায় একটি করে সার গোডাউন নির্মাণ করা হবে।
৫১৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় করে জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ মেয়াদে গোডাউনগুলো নির্মাণ করা হবে। ১৩টি গোডাউনের প্রত্যেকটির জন্য ন্যূনতম ৩ দশমিক ৮ একর জমি লাগবে। এসব গোডাউনে সড়ক, নৌ ও রেলপথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে। গোডাউনগুলোর অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ বছর। এসব স্থানে সার গোডাউনগুলো নির্মাণ করার ফলে স্বল্পতম সময়ে কৃষকদের মধ্যে সার সরবরাহ সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) সূত্র জানায়, ১৩টি গোডাউন নির্মাণের জন্য ৫২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। এর পাশাপাশি কৃষকদের সার সরবরাহ নিশ্চিতসহ যানবাহন সুবিধা দেওয়া হবে। এসব গোডাউন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ, স্যানিটারি সুবিধা, পানি সরবরাহ, অফিস ভবন ও মৃত্তিকা পরীক্ষাগার নির্মাণ করা হবে। এতে গোডাউন এলাকার জনসাধারণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।
বিসিআইসি মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সংরক্ষণের অভাবে ইউরিয়া সার প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে। আর্দ্রতার কারণে ইউরিয়া সার এক সঙ্গে লেগে যায়। ফলে কৃষক এসব সার নিতে চান না। তখন কৃষক সারের বস্তা পরিবর্তন করার দাবি জানান। কিন্তু অনেক সময় কৃষকের দাবি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এভাবেই প্রতিবছর ইউরিয়া সার নষ্ট হচ্ছে। দেরিতে হলেও সরকার কৃষকের দাবি অনুধাবন করতে পেরেছে।
১৩টি গোডাউন নির্মাণ প্রসঙ্গে বিসিআইসি মহাব্যবস্থাপক বলেন, আমরা ১৩টি জেলায় একটি করে গোডাউন নির্মাণ করবো। কারণ ঢাকা থেকে এসব স্থানে সার পরিবহন ও রি-ব্যাগিং করেত অনেক টাকা প্রতিবছর অপচয় হচ্ছে। এসব গোডাউনে সার সংরক্ষণের ফলে সহজেই কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা যাবে। ইউরিয়া সারের অপচয়ও রোধ হবে। কারণ প্রতিবছর গোডাউন ভাড়া ও রি-ব্যাগিং বাবদ ২৩৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৬
এমআইএস/টিআই