ঢাকা: গার্মেন্টস কারখানাগুলোকে অবৈধভাবে গ্রুপ বিমার সনদ দিচ্ছে বিজিএমইএ (বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি)। এ অভিযোগ পাওয়া গেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সূত্রে।
গত ১৪ মে ইন্টারলিঙ্ক ড্রেসেসকে গ্রুপ বিমার সনদ দিয়েছে বিজিএমইএ। এতে বিমার মেয়াদ দেওয়া হয়েছে ২০১৭ সালের ০৬ মে পর্যন্ত। সনদপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বিজিএমইএ’র সহ সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসির।
ইন্টারলিঙ্কের মতো অসংখ্য কারখানাকে এভাবে সনদ দিচ্ছে বিজিএমইএ। কিন্তু বিমা আইন অনুসারে আইডিআরএ’র অনুমতি ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান গ্রুপ বিমার সনদ দেওয়ার অধিকার রাখে না। বিজিএমইএ’কে গ্রুপ বিমার সনদ দেওয়ার অনুমতি কখনোই আইডিআরএ দেয়নি বলেও জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।
আইডিআরএ সূত্র জানায়, শ্রম আইন-২০০৬ এর ৯৯ ধারা অনুসারে ১০০ জন বা তার বেশি শ্রমিক কাজ করেন- এমন কারখানার জন্য গ্রুপ বিমা করা বাধ্যতামূলক। আর সে বিমা করতে হবে বিমা কোম্পানির মাধ্যমেই। কিন্তু বিজিএমইএ তাদের আর্থিক শক্তির জোরে নিজেদের ইচ্ছামতো অবৈধভাবে এ ধরনের সনদপত্র ইস্যু করে যাচ্ছে।
আইডিআরএ’র সদস্য জুবের আহমেদ খান বাংলানিউজকে বলেন, আইডিআরএ’র অনুমতি ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান আইনসঙ্গতভাবে বিমা সনদ ইস্যু করতে পারে না। আর বিজিএমইএ’কে এ ধরনের কোনো অনুমতি আইডিআরএ দেয়নি। যদি তারা গ্রুপ বিমার সনদ দিতেও চায়, তাহলে তা অবশ্যই কোনো বিমা কোম্পানির মাধ্যমেই করতে হবে।
বিজিএমইএ গ্রুপ বিমার সনদ ইস্যু করায় শ্রমিকরাই মূলত ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে দাবি করেছেন শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার।
নাজমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিজিএমইএ আইনের বাইরে গিয়ে গার্মেন্টস কারখানাগুলোকে গ্রুপ বিমার সনদপত্র ইস্যু করছে, যেটি অবৈধ। ফলে কখনো কোনো শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হলে আইনগতভাবে ক্ষতিপূরণের দাবির ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছেন। আহত ও নিহত শ্রমিকের স্বজনেরা বিজিএমইএ’তে ক্ষতিপূরণের জন্য ধরনা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না অনেক সময়। বিজিএমইএ’র উচিত, নিয়ম অনুসারে আইন মেনেই গ্রুপ বিমা সনদ ইস্যু করা’।
গ্রুপ বিমা সনদ ইস্যু করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিজিএমইএ’র সহ সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসির।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘গ্রুপ বিমা করা এখন সব কারখানার জন্যই বাধ্যতামূলক। আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গ্রুপবিমার সনদপত্র দিচ্ছি কারখানাগুলোকে, এটি সত্যি। আমরা চেষ্টা করছি, অতি দ্রুত কোনো বিমা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিতে আসতে’।
শ্রম আইন-২০০৬ এ বলা আছে, ‘যে সকল প্রতিষ্ঠানে অন্যূন ১০০ জন স্থায়ী শ্রমিক কর্মরত আছেন, সেখানে মালিককে প্রচলিত বিমা আইন অনুসারে গ্রুপ বিমা চালু করতে হবে। বিমা দাবির টাকা এ আইনের অধীনে শ্রমিকের অন্যান্য প্রাপ্যের অতিরিক্ত হবে। তবে শর্ত থাকবে, শ্রমিকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিমা দাবি আদায় মালিকের দায়িত্ব হবে এবং মালিক বিমা দাবি থেকে আদায়কৃত অর্থ পোষ্যদের সরাসরি প্রদানের ব্যবস্থা করবেন’।
‘অন্য আইনে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুক না কেন, এ ধারা অনুসারে কোনো বিমা দাবি উত্থাপিত হলে অনুর্ধ্ব ১২০ দিনের মধ্যে বিমা কোম্পানি ও মালিক যৌথ উদ্যোগে তার নিষ্পত্তি করবেন’।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পোশাক কারখানায় ৪০ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৬
ইউএম/এএসআর