ঢাকা: চলতি বছরের জুলাই মাসে হঠাৎ করে নামতে শুরু করে প্রবাসী আয়ের গতি। এরপর আরো দুই মাস পেরিয়ে গেলেও রেমিটেন্স বাড়ছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) এক হাজার পাঁচ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা এর আগের মাস জুলাইয়ের তুলনায় চারশ ৬০ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন মার্কির ডলার কম। গত অর্থবছরের তুলনায়ও রেমিটেন্স প্রায় ৩৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার কম ছিল।
এরপরে আগস্ট মাসে রেমিটেন্স সামান্য বাড়লেও সেপ্টেম্বর মাসে তা আবারও কমে আসে।
বাংলাদেশে ব্যাংকের হিসাব বলছে, গত আগস্ট মাসে এক হাজার একশ ৮৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স বাংলাদেশে আসে। সেপ্টেম্বর মাসে তা কমে এসে দাঁড়ায়, মাত্র এক হাজার ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশিদের অন্যতম শ্রমবাজার হওয়ায় এসব দেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে। তবে এবছরের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় সৌদি আরবসহ তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলো আর্থিক মন্দার মুখে পড়ে। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ে অসংখ্য শ্রমিক। একারণেই কমে এসেছে রেমিটেন্সের পরিমাণ।
অবশ্য মন্দার মধ্যেও মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিক-প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। তবে এদের বেশির ভাগই অদক্ষ। তাই বেতনও পায় সামান্যই। ইচ্ছে থাকলেও তারা বেশি অর্থ দেশে পাঠাতে পারেন না।
তাছাড়া সম্প্রতি সৌদি আরব সেদেশে কর্মরত প্রবাসীদের নিজ নিজ দেশে রেমিটেন্স পাঠানোর উপর একটি নতুন কর আরোপ করেছে। এর ফলে বৈধভাবে অর্থ আসা কমেছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, “বিদেশ যাওয়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের সংখ্যা কম নয়। তবে যারা যাচ্ছেন তাদের বড় একটি অংশ নারী। এরা পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় কম বেতনে কাজ করেন। ফলে রেমিটেন্সে তাদের ভূমিকাটা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ”
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তেলের দাম কমে যাওয়ায় শ্রমিকদের বাড়তি কাজ পাওয়ার বা বেতন বৃদ্ধির সুযোগও কমে আসছে। এটাকেও রেমিটেন্স কমার অন্যতম কারণ বলে বিবেচনা করছেন এই অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকরাও এমন অনিশ্চিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় আয়ের সব অর্থ দেশে না পাঠিয়ে নিজেদের কাছে কিছু রেখে দেন। আর সৌদি আরব বাড়তি কর ধার্য করায় বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানোও কমে যেতে পারে। ’
তবে সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক কোনো জরিপ না থাকায় রেমিটেন্স কমে আসার তেমন কোনো কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেনি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, “মূলত রেমিটেন্সের বিষয়গুলোর দেখাশোনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই তাদেরই উচিত প্রবাসীআয় বৃদ্ধি বা কমার কারণ খতিয়ে দেখা। ”
তবে আপাত দৃষ্টিতে মধ্যপ্রাচ্যে তেলের মূল্য কমে যাওয়া, বেক্সিটের প্রভাবে পাউন্ডের মূল্য পড়ে যাওয়াকেও অন্যতম কারণ বলে মনে মন্তব্য করেন তিনিও।
এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সৌদি আরবের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে অভিমত দেন বিশ্লেষকেরা।
গবেষক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব কাটাতে এবং রাজস্বআয় বাড়াতে সৌদি আরব রেমিটেন্সের উপর কর আরোপ করে থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশসহ শ্রমিক প্রেরক দেশগুলো সংঘবদ্ধভাবে সৌদি সরকারকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠানো পর্যন্ত কর মওকুফ করার বিষয়ে অনুরোধ করতে পারে। এতে করে শ্রমিকদের পাশাপাশি বাংলাদেশও লাভবান হবে। অন্যথায় হুন্ডির মত অবৈধ পন্থা বাড়তে থাকবে। ”
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৬
জেপি/জেএম