ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কর্মীদের ১০৭ কোটি টাকা লোপাট গ্রামীণ টেলিকমের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৬
কর্মীদের ১০৭ কোটি টাকা লোপাট গ্রামীণ টেলিকমের

ঢাকা: শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ টেলিকম। সেই গ্রামীণ টেলিকমই ১০ বছরে কর্মীদের ১০৭ কোটি ৯৩ লাখ ২৬ হাজার ২০ টাকা লোপাট করেছে- এমন তথ্য উঠে আসে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট থেকে।

শ্রম আইন অনুযায়ী- কোনো প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পত্তি ১ কোটি টাকা বা তার বেশি হলে নিট মুনাফার ৫ শতাংশ পাবেন কর্মীরা। গ্রামীণ টেলিকমের অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্টে দেখা যায়, ২০০৬-১৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে গ্রামীণ টেলিকমের নিট মুনাফা আসে ২ হাজার ১৫৮ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার ৪১৭ টাকা। সে হিস‍াবে এই মুনাফার ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১০৭ কোটি ৯৩ লাখ ২৬ হাজার ২০ টাকা পাওয়ার কথা প্রতিষ্ঠানের ১১০ জন কর্মীর। এর ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৮০ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ৮১৬ টাকা সরাসরি পাবেন গ্রামীণ টেলিকমের ১১০ জন কর্মী। অন্যদিকে বাকি ১০ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার টাকায় কোম্পানির অভ্যন্তরীণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ও সম পরিমাণ অর্থ সরকারের শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে দেওয়ার কথা থাকলেও এসবের কোনোটিই করেনি গ্রামীণ টেলিকম। পুরো অর্থই তুলে নিয়েছে নিজের পকেটে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে প্রতিষ্ঠানের কর্মী জানান, কেউ প্রাপ্য ওই টাকার প্রসঙ্গ তুললেই কর্তৃপক্ষ চাকরিচ্যুত করার ভয় দেখান।

বাংলানিউজকে তিনি আরও বলেন, প্রথমে আমরা জানতামই না নিট মুনাফার ৫ শতাংশ কর্মীরা পাবেন। জানার পরে ওই অর্থ দাবি করায় আমাদের ওপর মানসিক নির্যাতন শুরু হয়।

নিট মুনাফা কর্মীদের সঙ্গে ভাগাভাগির প্রশ্নে গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠানটি একটি অলাভজনক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান দাবি কর‍া হয়- জানিয়েছেন শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শ্রম আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকম অবশ্যই তাদের নিট মুনাফার অংশ কর্মীদের দিতে বাধ্য। কারণ তাদের স্থায়ী সম্পত্তির পরিমাণ ২ কোটি টাকারও বেশি। আর যে কোনো প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পত্তি ১ কোটি টাকা হলেই তারা তাদের কোম্পানির নিট মুনাফার অংশ কর্মীদের দিতে আইনগতভাবে বাধ্য থাকবে। গ্রামীণ টেলিকমের উচিৎ তাদের মুনাফার অংশের ভাগ কর্মীদের দেওয়া।

কোম্পানিটির অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৬ সালে ৪২ কোটি ১১ লাখ ২৪ হাজার টাকা, ২০০৭ সালের ৩৭ কোটি ১৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, ২০০৮ সালে ৩৯ কোটি ৪৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ২০০৯ সালে ৫২ কোটি ৭৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, ২০১০ সালে ২১৮ কোটি ২০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, ২০১১ সালে ৪৮১ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ২০১২ সালে ৩৩১ কোটি ২৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা, ২০১৩ সালে ৩০৪ কোটি ৮৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, ২০১৪ সালে ৩১৬ কোটি ২৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা ও ২০১৫ সালে ৩৩৪ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিট মুনাফা হয়েছে।

তবে এসব বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ গ্রামীণ টেলিকমের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও এ প্রসঙ্গে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

গ্রামীণ টেলিকম বাংলাদেশে নোকিয়া মোবাইল ফোনের ডিলার। তাছাড়া গ্রামীণ ফোন কোম্পানির ৩৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক প্রতিষ্ঠানটি। গ্রামীণ টেলিকম পল্লী ফোন প্রকল্পের মাধ্যমে বেশি পরিচিতি পায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৬
ইউএম/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।